ঢাকা: হাজার হাজার গায়েবি মামলা দায়েরের মতো সরকারের দুই মন্ত্রী বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে গায়েবি তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি। জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাতে গিয়ে কল্পিত লবিস্ট ফার্মের সংখ্যা এবং ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে তারা ফেঁসে গেছেন বলে দাবি বিএনপির।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির পক্ষে লিখিত এই বক্তব্য তুলে ধরেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
ড. মোশাররফ বলেন, ২০১৮ সালে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স বোঝাই করে বিপুল বিজয়ের দাবিদার বর্তমান ‘নিশিরাতের সরকারের’ তথ্যমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, জাতীয় সংসদে এবং নিজেদের অফিসে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ করে নিজেদের দুর্নীতি, অপশাসন এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশ-বিদেশে যে সমালোচনার ঝড় বইছে, তা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হিসেবে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। তাদের ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত অভিযোগ জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি বরং বিশ্ব গণতন্ত্র সম্মেলনে বর্জিত এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত সরকারের হতাশ মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য জনগণ অক্ষমের আর্তনাদ বলে কৌতুকের রসদ হিসেবে গণ্য করেছে।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন—বিএনপি ৮টি লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং তার একটি ফার্মকেই দিয়েছে ১০ লাখ অর্থাৎ ১ মিলিয়ন ডলার। অন্য ৭টি ফার্ম সম্পর্কে তার বক্তব্য হলো ‘সব তথ্য আছে’। কিন্তু কিছুই দিতে পারেননি। অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছেন—বিএনপি বিভিন্ন নামে ১২টির বেশি লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। কিন্তু কে, কার সাথে, কত টাকার চুক্তি করেছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারেননি। অর্থাৎ স্বভাবজাত ফাঁকা আওয়াজ করেছেন। অথচ, সত্য তো এই যে, বিএনপি কোনো লবিস্ট নিয়োগের সিদ্ধান্তই কখনও নেয়নি, লবিস্ট নিয়োগ করার প্রয়োজনও বোধ করেনি। লবিস্টরা যেসব কথা বলবেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ তা নিজেরাই বলে থাকেন এবং তাও গোপনে না প্রকাশ্যে।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি মহাসচিবের যে সব পত্রের কপি সাংবাদিকদের মাঝে বিলি করেছেন, তাতে কোথাও এমন কোনো বক্তব্য নেই যা তিনি এবং দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যে বলেননি, মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়নি কিম্বা আন্তর্জাতিক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। এসব বক্তব্যের কোনোটাই জনগণ কিম্বা দেশের স্বার্থবিরোধী তো নয়ই বরং জনগণ ও দেশের পক্ষে বিএনপির নৈতিক অবস্থান ও দায়িত্বের প্রকাশ।
ড. মোশাররফ বলেন, সরকারের মন্ত্রীদের দাবি, তারা কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেননি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন—একটি ‘জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান’কে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তথ্য প্রমাণ বলে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষে সজীব ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম লবিস্ট ‘অ্যালক্যাডে অ্যান্ড ফো’কে নিয়োগ দেন ২০০৪ সালের ২৯ নভেম্বর, যা কার্যকর হয় ১ জানুয়ারি ২০০৫ থেকে। ২০০৫, ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে এই লবিস্ট ফার্মকে চুক্তি স্বাক্ষরকারী হিসাবে সজীব ওয়াজেদ মাসে ৩০ হাজার ডলার হিসেবে সাড়ে ১২ লাখ ডলার অর্থাৎ ১০ কোটি টাকার বেশি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বহু বছর ধরে নিয়মিত চুক্তিতে কাজ করা লবিস্ট প্রতিষ্ঠান বিজিআর ছাড়াও গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন ও সফর বিনিময়ের লক্ষ্যে মাত্র ১ মাসের জন্য ৪০ হাজার ডলার ফিতে নিয়োগ করা হয়েছিল আরেকটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রিডল্যান্ডার’কে। এ ব্যাপারে কেঁচো খুড়তে গেলে আরও বহু বড় বড় সাপ বেরিয়ে আসবে। এসব চুক্তি সম্পর্কে মন্ত্রীদ্বয় যদি না জেনে থাকেন তাহলে সরকার ও সরকারদলীয় কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অজ্ঞতা ও গুরুত্বহীন এসব মন্ত্রীর বিজ্ঞের মতো কথা বলা বন্ধ করা উচিত। আর যদি জানেন, তাহলে তথ্য গোপন করার অভিযোগে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। কিন্তু এসব তাদের স্বভাবের সাথে মানাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
এমএইচ/এমজেএফ