ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আড়াই মাস হাসপাতালে থাকার পর মঙ্গলবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে যাবেন। এ বিষয়টি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
তারপরও তাকে কেন বাসায় নেওয়া হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে যা জানা গেছে, সেটা হলো খালেদা জিয়া নিজেই বাসায় যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তিনি বলছেন, হাসপাতালে আমার কোনো চিকিৎসা নেই, শুধু শুধু এখানে কেন শুয়ে থাকবো। এর চেয়ে বাসায় থাকাই ভালো।
খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান বাংলানিউজকে বলেন, ম্যাডাম জিয়া হাসপাতাল থেকে ৮০ দিন পর বাসায় ফিরবেন। চিকিৎসকরা কেবল তার রক্তক্ষরণটা বন্ধ করতে পেরেছেন। লিভার সিরোসিসের উপযুক্ত চিকিৎসা তো দেশে নেই। বিদেশে সে চিকিৎসার সুযোগটা তাকে দেওয়া না হলে তিনি কতদিন আমাদের মাঝে থাকবেন তা আল্লাহ্ পাকই জানেন।
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে একটি ক্যাপসুল অ্যান্ডোসকপি এনে ক্ষুদ্রান্তের নীচে ছিদ্র পাওয়া যায় সেটা বন্ধ করায় রক্তক্ষরণটা বন্ধ হয়েছে। মূল চিকিৎসা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সেটা বাংলাদেশে করা সম্ভব না। আর সরকারও তাকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। সুতরাং এখন আল্লাহর ওপর ভরসা করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা চাচ্ছিলেন তিনি হাসপাতালে থাকুন। কারণ যেকোনো সময় তার অবস্থার অবনতি হতে পারে। তখন বাসা থেকে হাসপাতালে আনতে সময় লাগবে। কিন্তু খালেদা জিয়ার নিজের ইচ্ছায়ই তারা শেষ পর্যন্ত তাকে বাসায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এ বিষয়ে চিকিৎসক দলের সদস্যরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন।
২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর রক্তবমি হওয়ায় খালেদা জিয়াকে অ্যাভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি বিশেষ চিকিৎসক দল তার চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। ৭৭ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে ভর্তির পরও তার রক্তবমিসহ রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এতে তার রক্তের হিমোগ্লোবিন মাত্রাতিরিক্ত কমে যেতে শুরু করে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে রক্ত দিতে হতো তাকে। লিভারের সমস্যার কারণে তার অরুচি, ওজন হ্রাস, জ্বর জ্বর ভাব, শরীরে পানি আসা, খনিজে অসমতাসহ বহু সমস্যা দেখা দেয়। তার শরীরে প্রধান ইলেকট্রোলাইট অর্থাৎ সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্লোরিন উপাদানের পরিমাণ কমে যেতে থাকে। তার ডায়াবেটিসও অনিয়ন্ত্রিত ছিল। কিডনির ক্রিটিনিন বর্ডার লাইনও খারাপ পর্যায়ে চলে যায়।
গত ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ায় খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তিনবার এই রক্তক্ষরণ সামাল দেওয়া গেলেও চতুর্থবার হলে বিপদ ঘটতে পারে। চিকিৎসকরা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে তারা অসহায় বোধ করছেন। বাংলাদেশে এ ধরনের রক্তক্ষরণ সামাল দেওয়ার কারিগরি সুযোগ নেই। চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত দেশের বাইরে নেওয়ার সুপারিশ করেন।
তারা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানির বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার সুপারিশও করেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকারের অনুমতি চাওয়া হয়। সরকার বলেছে, আইনি বাধ্য-বাধকতায় তাকে দেশের বাইরে যেতে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে বিএনপির পক্ষ থকে বলা হয়, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সুচিকিৎসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা বলেন, এখনও খালেদা জিয়া ঝুঁকিমুক্ত হননি। যেকোনো সময় আবারও নতুন বা পুরোনো উৎস থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। তাই দ্রুত বিদেশে উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য তাকে নেওয়া দরকার এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে লিভার ট্রান্সপ্লানটেশনই একমাত্র উপায় বলে তাদের অভিমত।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, ম্যাডামকে বাসায় নেওয়া হবে এ বিষয়টি এখনও অফিসিয়ালভাবে আমি জানতে পারিনি। তার চিকিৎসকরা বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২২
এমএইচ/এসআইএস