সাতক্ষীরা: প্রেম সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় কলেজছাত্রকে ডেকে নিয়ে মারধর করার পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ এবং মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
রোববার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে তালা সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্র তালা সদরের জাতপুর গ্রামের বাসিন্দা ও জাতপুর টেকনিক্যাল কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য খুলনায় কোচিং করছে।
তাকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতরা হলেন- তালার মাঝিয়াড়া গ্রামের সৈয়দ ইদ্রিসের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব (২৫), হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের গণেশ চক্রবর্তীর ছেলে ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী (৩২), তালা গার্লস স্কুলের পেছনের বাসিন্দা ছাত্রলীগ কর্মী জে. আর সুমন (২৫), তালার মহান্দি গ্রামের ছাত্রলীগ কর্মী জয় (২৪) ও তালা সদরের নজির শেখের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী নাহিদ হাসান উৎস (২৪)।
নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্রের বাবা বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে ওদের কোনো বিরোধ নেই। একসঙ্গে পড়েও না। রোববার দুপুর ১টার দিকে আকস্মিক আমার ছেলের পূর্ব পরিচিত নাহিদ হাসান উৎস নামে একটি ছেলে তাকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায় তালা কলেজের সামনে। সেখান থেকে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় কলেজের মধ্যে একটি রুমে। সেখানে নিয়ে মারধর করে মাথা ন্যাড়া করে দেয় ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। ওই সময় আমার স্ত্রীর কাছে ফোন করে ছেলেকে মারধরের চিৎকার শোনাচ্ছিল তারা। পরে আমার ভাইপোরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
তালা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ হুমায়ূন কবীর জানান, এ ধরনের কোনো খবর তার জানা নেই।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ছাত্রলীগের নেতা আকিবের সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি আকিবের সঙ্গে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। নতুন করে সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই ছাত্রের সঙ্গে। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে আকিব তাকে নাহিদের মাধ্যমে ডেকে এনে মারধর ও মাথা ন্যাড়া করে দেয়।
এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রলীগ কর্মী জয় বলেন, তাকে ডেকে এনে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। পরে এ ঘটনা মিটমাটও হয়েছে। তবুও তারা কেস-কামারির মধ্যে কেন গেল, বুঝতে পারছি না।
সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেন বলেন, সাধারণ ছাত্র বা মানুষের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এমন আচরণ হয়ে থাকলে, তদন্ত করে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জেহাদ আলম ফকরুল খান জানান, এ ঘটনায় নির্যাতিত শিক্ষার্থীর বাবা পাঁচজনসহ বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছেন।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২২
আরএ