ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

জাফরুল্লাহর জাতীয় সরকারের রূপরেখা, একমত নয় বিএনপি

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩২ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২২
জাফরুল্লাহর জাতীয় সরকারের রূপরেখা, একমত নয় বিএনপি শামা ওবায়েদ

ঢাকা: ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সম্প্রতি জাতীয় সরকারের একটি ফর্মুলা দিয়েছেন। সেই ফর্মুলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দলটির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের একমাত্র কন্যা শামা ওবায়েদের নাম রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বুধবার (১৮ মে) বনানীতে নিজ বাসায় বাংলানিউজের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন শামা ওবায়েদ। তিনি বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ একজন মুক্তিযোদ্ধা, দেশের বিশিষ্ট নাগরিক। তিনি তার মত প্রকাশ করতেই পারেন। তবে তার মতের সঙ্গে আমাদের দল বিএনপি ও আমি ব্যক্তিগতভাবে একমত নই। আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। এর আগে জাতীয় সরকার গঠনের প্রশ্নই আসে না।

শামা ওবায়েদের সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

বাংলানিউজ: সম্প্রতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জাতীয় সরকারের একটি ফর্মুলা দিয়েছেন। সেখানে আপনার নামও রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

শামা ওবায়েদ: বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আমরা আছি। বৃহত্তর একটা ঐক্যের মাধ্যমে এ আন্দোলন আরও বেগবান হবে। আওয়ামী লীগ সরকার ও তাদের গৃহপালিত বিরোধীদল জাতীয় পার্টি, যারা সরকারের হালুয়া-রুটির ভাগ পাচ্ছে, এরা ছাড়া প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ চায় দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হোক। ২০১৮ সাল ও তার আগের নির্বাচনে আমরা দেখেছি, মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এই আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন ক্ষমতায় আছে, মানুষ ভোট দিতে পারবে না। সে বাস্তবতায় বিএনপি তাদের অবস্থান জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিষ্কার করেছে।

ডা. জাফরুল্লাহ সাহেব যেটা বলেছেন, আমি মনে করি এটা ওনার ব্যক্তিগত প্রস্তাব বা ব্যক্তিগত ভাবনা থেকে করেছেন। এটা তিনি দিতে পারেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, দেশের বিশিষ্ট নাগরিক। তিনি কী করবেন না করবেন, সেটা তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু এটার সঙ্গে আমি একমত নই এবং আমার দলও একমত নয়। কারণ বিএনপি ইতোমধ্যে একটা অবস্থান পরিষ্কার করেছে। জাতীয় সরকার এখন কীভাবে হবে? এটা গঠন করবে কে? জাতীয় সরকার গঠন করার উদাহরণ বাংলাদেশের ইতিহাসে নেই। বাংলাদেশে এরকম কখনও হয়নি।

তবে সেনাবাহিনী সমর্থিত সরকার এসেছে। যেমন এক-এগারো সরকার এসেছে। কিন্তু জাতীয় সরকারের উদ্যোগটা কে নেবে? এই কনসেপ্টটাই আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা একটা সুষ্ঠু ভোট চাই, সেই ভোটের মাধ্যমে যদি বিএনপি সরকার গঠন করতে পারে তখন বিএনপি এই আন্দোলন সংগ্রামে যারা ছিল; রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ সবাইকে নিয়ে দেশ পরিচালনা করবে। সে ক্ষেত্রে একটা জাতীয় সরকার হতে পারে। সেটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরে। এখন সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে না।

বাংলানিউজ: আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ সাতটি দল একটি নতুন জোট করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তাঁরা কয়েকটি সভাও করেছে। তাঁরা একাদশ নির্বানের আগে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফন্ট করেছিলেন, এখন আলাদা জোট করছেন। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?

শামা ওবায়েদ: আসলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আছে কিনা আমি জানি না। তবে কোনো কার্যক্রম নেই। ২০১৮ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই জোট গঠন করা হয়েছিল। সেটার এখন আর কার্যক্রম নেই। ওনারা যে সাত দলীয় জোট করেছেন, এ বিষয়ে ওনাদের জিজ্ঞাসা করাই ভালো। তবে আমি যেটা বুঝি, সেটা হলো ওনাদের যে দাবি, সেটা বিএনপিও চায়। যেমন দলীয় কোনো সরকারের অধীনে কিংবা শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব না। এরকম আরও দাবি আছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান, এগুলো বিএনপি যা চাচ্ছে, মান্না ভাইদের সঙ্গে যারা আছেন তারাও একই দাবি করছেন। আমি জানি বিএনপি অনানুষ্ঠানিকভাবে সব দলের সঙ্গে কথা বলছে। কারণ, একটা প্ল্যাটফর্ম হোক বা যুগপৎ হোক সবার দাবি একটা। সেই দাবিতেই সবার মাঠে থাকা উদ্দেশ্য। সেটা যদি তারা করেন ভালো।

বাংলানিউজ: সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি যে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা চায়, সেই তালিকার এক নম্বরে তো তারেক রহমানের নাম আসবে।

শামা ওবায়েদ: ওবায়দুল কাদের সাহেব ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বলেছেন, যারা আওয়ামী লীগ করে তারাই টাকা পাচার করেছে। তাহলে এই বক্তব্যটা স্ববিরোধী হয়ে গেলো না? তারেক রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে তো আওয়ামী লীগ প্রথম দিন থেকেই লেগে আছে। সেই যে এক-এগারো সরকার, যেটা আমরা বলি শেখ হাসিনার এক্সটেন্ডেড সরকার ছিল, কারণ সেই ১/১১ সরকার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য সব ব্যবস্থা করেছিল। সেই সরকারের সময় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, জিয়া পরিবার, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলো সবই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারেক রহমান সাহেব টাকা পাচার করেছেন, সেটা কি তারা প্রমাণ করতে পেরেছেন? লোয়ার কোর্টে একটা মামলায় তারেক রহমান সাহেবের পক্ষে রায় এসেছিল, সেই বিচারককেও দেশত্যাগ করতে হয়েছে। আমি আদালত নিয়ে কথা বলতে চাই না। তবে এ ধরনের কার্যক্রম কিন্তু আমাদের আইনি ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ওবায়দুল কাদের সাহেবের ভাই, ওনার দলের লোকজন ওনার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তো তিনি কী বললেন না বললেন তাতে আসলে কিছু যায় আসে না। বাস্তবতা হলো, আমরা দেখছি প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের লোকজন দুর্নীতি-টাকা পাচারের জন্য গ্রেফতার হচ্ছেন। পি কে হালদারসহ বিগত দিনে যারা টাকা পাচার করেছেন, এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলের মন্ত্রী, এমপি, সচিবরা কানাডা, মালয়েশিয়ায় বাড়ি বানাচ্ছেন, তারা টাকা পাচার করছেন। ওনারা তো পরিষ্কার করেছেন কারা টাকা পাচার করছে। সেজন্য আমি ওনার (ওবায়দুল কাদের) এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করছি।

বাংলানিউজ: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কয়েকদিন আগে বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন। তিনি তো সাজাপ্রাপ্ত, তিনি কীভাবে প্রধানমন্ত্রী হবেন?

শামা ওবায়েদ: আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, এখন বর্তমানে যিনি প্রধানমন্ত্রী আছেন, তাঁর মামলাগুলো তো চলেনি। যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হলেন সবগুলো মামলাই খারিজ হয়ে গেছে।

বাংলানিউজ: শেখ হাসিনার তো সাজা হয়নি। মামলা ছিল, বিচার হয়নি।

শামা ওবায়েদ: কেন বিচার হয়নি? তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বিধায় বিচার হয়নি। আওয়ামী লীগের বক্তব্য হলো, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি ১/১১ সরকারের মামলা। এই মামলায় তিনি (খালেদা জিয়া) সাজাপ্রাপ্ত, সেজন্য বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু যদি এই মামলার মেরিট বিবেচনা করা হয়, যদি রিভিউ করা হয়, এই মামলার কোনো মেরিট নাই। ইভেন যে জাজমেন্ট এসেছে, সেখানেও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। যখন আমরা কয়েকশ কোটি, হাজার কোটি নিয়ে আলাপ করি সেখানে দুই কোটি টাকার যে মামলা, সেই মামলার জাজমেন্টেও নাই খালেদা জিয়া সরাসরি জড়িত। ওই অনিয়মের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেটাই জাজমেন্টে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে মিস ইউজ অফ পাওয়ার।

বাংলানিউজ: বিএনপি যদি নির্বাচনে বিজয়ী হয় তখন একজনকে আগে প্রধানমন্ত্রী হতে হবে। পরে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের মামলা রিভিউ করে বাতিল, অথবা তাঁরা খালাস পাওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। এই যে একটা সময়, এই সময়টায় আপনারা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাকে বেছে নেবেন? এটাই দেশের জনগণ জানতে চায়।

শামা ওবায়েদ: সেটা সময় বলে দেবে। আলোচনা সাপেক্ষে, সর্বদলীয় ঐক্য যদি থাকে তাদের সবার সাথে আলোচনা হবে, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সেই প্রসেসটা কীভাবে হবে, তখন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাংলানিউজ: বাংলানিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

শামা ওবায়েদ: আপনার মাধ্যমে বাংলানিউজের সকল পাঠকদের ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২২
এমএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।