ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

ভাঙা-গড়ার খেলায় বাম দলগুলোর জোটের রাজনীতি

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৬ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২২
ভাঙা-গড়ার খেলায় বাম দলগুলোর জোটের রাজনীতি

ঢাকা: দীর্ঘ দিন ধরে ঐক্যের মাধ্যমে বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার কথা বলে আসছে দেশের বামপন্থি দলগুলো। এ লক্ষ্যে বৃহৎ ঐক্যের ডাক দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে বাম জোট গঠন করা হলেও বার বারই সংকটের মুখে পড়ছে।

বাম দলগুলোর এসব জোট কখনও নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে, আবার কখনও কোনো কোনো দল জোট বদল করে অন্য দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সম্প্রতি বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে দুই দল অবস্থান পরিবর্তন করে বিএনপি ধারার দিকে ঝুঁকেছে। তবে এই দুটি দলের বেরিয়ে যাওয়া জোটের রাজনীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন নেতারা।

আশির দশকে এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে ৮ দল ছিলো সেখানে বামপন্থি রাজনৈতিক দল সিপিবি, ন্যাপসহ কয়েকটি বাম দলও ছিলো। ওই সময় ৫ দলের আরেকটি জোট ছিলো, যে জোটে জাসদসহ আরও চারটি বাম দল অন্তভূক্ত ছিলো। স্বৈরাচার পতন এবং ১৯৯১-এর নির্বাচনের পর রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি হয়। ওই সময় বাম দলগুলো পুরনো দুই জোট থেকে বেরিয়ে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এবং আরও বৃহৎ পরিসরে বাম ও গণতান্ত্রিক দলের সমন্বয়ে ১১ দল গঠন করে। মূলত বাপন্থিদের দ্বারা পরিচালিত এই দুই জোট দীর্ঘ দিন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলো। তবে ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনকে কেন্দ্র করে এই দুই জোট ভেঙে যায়। ওয়ার্কার্স পার্টিসহ কয়েকটি বাম দল আওয়ামী লীগের জোটে যোগ দেওয়ায় বামফ্রন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। পাশাপাশি ওই বাম দলগুলোসহ গণফোরাম ১১ দল থেকে বেরিয়ে ১৪ দলে যোগ দেওয়ায় ১১ দলও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। সিপিবি ও বাসদসহ কয়েকটি দল বাম ফ্রন্টকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।  

এদিকে নব্বইয়ের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাম দলগুলো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ধারার বাইরে বৃহৎ বাম ঐক্য গড়ে তোলার কথা বলে এলেও তা বাস্তবায়নে বাধা, টানাপড়েন জটিলতার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে বামপন্থি কয়েকটি দল আওয়ামী লীগের জোটে অবস্থান করছে। বামপন্থি বলে পরিচিত জাসদ (রব) বিএনপির জাতীয় ঐক্য মঞ্চে রয়েছে। সম্প্রতি আরও দুটি বাম দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনের জোট গড়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে গেছে।

নব্বইয়ের দশকে গঠিত বামফ্রন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ দিন বামপন্থি দলগুলো ওই ধরনের দৃশ্যমান কোনো জোট গড়তে পারেনি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিপিবি এবং বাসদের প্রচেষ্টায় নতুন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠন করা হয়। সম্প্রতি এই জোট থেকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন বেরিয়ে যাওয়ায় আবারও বৃহৎ বাম ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তি দেখা দিলো। এই দুটি দল বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য মঞ্চে থাকা কয়েকটি দলের সঙ্গে গণতান্ত্রিক মঞ্চ নামের নতুন একটি জোট করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং এই দল দুটি ইতোমধ্যেই বিএনপির সঙ্গে বৈঠকও করেছে। তবে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলছেন, দুই দলকে বের করে দেওয়া বা বেরিয়ে যাওয়া জোটের বা বাম বিকল্প গড়ার ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতি হবে না। বরং এই দুটি দল দীর্ঘ দিন ধরেই বিএনপির ধারার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। এতে জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দেয়। ওই দুইটি দল জোটে না থাকায় বিভ্রান্তির অবসান হলো বলে তারা জানান।  

বাম জোটের ওই নেতারা আরও জানান, প্রবীণ বাম নেতা বদর উদ্দীন উমরের নেতৃত্বে ৯টি বাম দলের জোট ও ৪টি বাম দলের বাম ঐক্য নামের জোট রয়েছে তাদের সঙ্গে। এর পাশাপাশি প্রবীণ বামপন্থি নেতা পংকজ ভট্টাচার্যের ঐক্য ন্যাপ ও ১৪ দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া শরিফ নুরুল আম্বিয়ার বাংলাদেশ জাসদকে নিয়ে বৃহৎ বাম ঐক্য গড়ার আলোচনা চলছে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান শরিক সিপিবি এই উদ্যোগ নিয়ে দলটির নেতারা ওই সব দল ও জোটের সঙ্গে ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বাংলানিউজকে বলেন, ওই দুটি দলকে জোটে রাখা হয়নি। এতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং অনেক দিন ধরে তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ছিলো, সেটার অবসান হলো। আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে বিকল্প শক্তি হিসেবে বৃহৎ বাম ঐক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি। আমাদের লড়াই শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন নয়। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকা এই দুই দলের দুর্নীতি, দুশাসনেরও অবসান ঘটানো। ক্ষমতাকেন্দ্রীক কোনো না কোনো দলের সঙ্গে থাকা আমাদের লক্ষ্য না।

এ বিষয়ে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, দুটি দল না থাকলে জোটের ক্ষতি হবে না। তারা গণতান্ত্রিক মঞ্চ নামে নতুন জোটে করছে, বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছে এটা যে কোনো রাজনৈতিক দলের নিজস্ব ব্যাপার। আওয়ামী লীগের জোটেও বামপন্থি কয়েকটি দল গেছে। কিন্তু আমরা তাদের বলেছি, বাম জোটে থেকে গণতান্ত্রিক মঞ্চ বা এগুলো তো করা যায় না। আমরা বৃহৎ বাম ঐক্য গড়ার কাজ অব্যাহত রাখবো, অন্যান্য বাম দলগুলোর সঙ্গেও আমরা কথা বলবো।

বাম বৃহৎ ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণ এবং জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট রয়েছে তাদের সঙ্গে জোট করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একটি বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন বলে মনে করছি। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা গণতান্ত্রিক মঞ্চ গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছি। বিএনপি ২০ দলকে আর সক্রিয় করবে না এবংং জামায়াতকে নিয়ে কোনো কর্মসূচিতে যাবে না, এটা বিএনপির নেতারা আমাদেরকে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২২
এসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।