ঢাকা, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

‘চার খলিফায়’ ৩ বছর পার সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২
‘চার খলিফায়’ ৩ বছর পার সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের

সিলেট: তিন বছর আগে দেওয়া হয়েছিল সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটি। জেলা কমিটির নেতৃত্ব পান দুই শামীম।

২০১৯ সালের ২৯ জুলাই সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে জেলার সভাপতির দায়িত্বে আসেন শামীম আহমদ (ভিপি শামীম) ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ শামীম আহমদ।

এর দুইদিন আগে ২৭ জুলাই সম্মেলনে মহানগর যুবলীগের সভাপতি হন আলম খান মুক্তি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মুশফিক জায়গিরদার। কিন্তু পদ পেয়ে ৩ বছর কাটিয়ে দিলেন এই দুই কমিটির ‘চার খলিফা’।

কমিটি গঠন করে দেওয়ার তিন মাসের মধ্যেই আসে যুবলীগের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রদবদল। নানা অভিযোগে অভিযুক্ত যুবলীগের তৎকালীন চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বহিষ্কার করা হয়। তার হাত দিয়ে গঠিত সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি ৩ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। যে কারণে সংগঠনে দেখা দেয় স্থবিরতা। পদ প্রত্যাশী কর্মীদের হতাশায় কেটেছে এই ৩টি বছর।

অবশেষে মেয়াদ শেষে দুই কমিটির অনুমোদন দিচ্ছে কেন্দ্র। এ মাসের মধ্যেই উভয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়ে আসতে পারে- এমনটি জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

যদিও সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, করোনা মহামারির কারণে তাদের প্রায় দুই বছর সময় চলে যায়। এরপর তারা কমিটি তৈরি করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দেন।  

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে সম্মেলনের প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। দ্বিতীয় পর্বে নগরীর রিকাবিবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব উঠে দুই শামীমের হাতে। তাদের নিয়ে আশাবাদি ছিলেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ প্রত্যাশীরা। কিন্তু অপেক্ষায় কেটে যায় ৩টি বছর।

মহানগর যুবলীগ: দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই ভোটের মাধ্যমেই সিলেট মহানগর যুবলীগের নেতৃত্ব উঠে আলম খান মুক্তি ও মুশফিক জায়গিরদারের হাতে। সভাপতি পদে মুক্তি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মুশফিক ৩ বছর পার করে দিলেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি।  

সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ বলেন, কমিটির মেয়াদ একমাস আগে পেরিয়ে গেছে। এরইমধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যে অনুমোদন হয়ে আসবে বলে আমি আশাবাদি। জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হলেও এতোদিন জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৮টিতে এবং ৪টি পৌরসভার মধ্যে শুধু কানাইঘাটে পৌর কমিটি করা হয়েছে। উপজেলাগুলোর মধ্যে সিলেট সদর, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ এবং পৌরসভাগুলোর মধ্যে গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বিশ্বনাথ পৌরসভায় কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।   

সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য শামিম আহমদ বলেন, কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ঠিকই, তবে ইতোমধ্যে আমরা ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যে কমিটি অনুমোদন হয়ে চলে আসবে।
 
তবে নেতাকর্মীরা বলেন, জেলা যুবলীগের কমিটির পরিধি মহানগরের চেয়ে বড় হলেও মহানগর কমিটিতে ১১১ সদস্য বিশিষ্ট। সেক্ষেত্রে দীর্ঘ ৩ বছর পার করা জেলা কমিটির ১০১ সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে মহানগরের চেয়ে বেশি করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।    

কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও পূর্ণাঙ্গ করতে না পারার বিষয়ে সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি বলেন, আমরা ৭/৮ মাস আগে ১১১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। অনুমোদনের বিষয়টি কেন্দ্রের হাতে। কেন্দ্র যাচাই-বাছাই করে কমিটি অনুমোদন দেবে।

মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গিরদার বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। কেন্দ্রীয় কমিটি যাচাই-বাছাইয়ের পর কমিটি দেবে। তবে মহানগর এলাকার ২৭টি ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে তারা ৭১ সদস্য বিশিষ্ট যুবলীগের কমিটিগুলোর অনুমোদন দিয়েছেন।       

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে কাউন্সিলের জগদীশ দাসকে সভাপতি ও আজাদুর রহমান আজাদকে সাধারণ সম্পাদক করে সিলেট জেলা যুবলীগের কমিটি হয়। ওই কমিটির অনেকে আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান করে নেন। ফলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদত্যাগ করলে শামীম আহমদ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও মহসিন কামরান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ শামীম আহমদ নির্বাচিত হন।

একইভাবে ২০০৬ সালে অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামীম আহমদকে সভাপতি ও আব্দুর রহমান জামিলকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর যুবলীগের কমিটি হয়। পরবর্তীতে তারাও আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান করে নেন। এরপর থেকে ২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত কোনো কমিটি ছিল না। ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই সংগঠনের তৎকালীন চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর উপস্থিতিতে সিলেট মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে ভোটে আলম খান মুক্তি সভাপতি এবং মুশফিক জায়গীরদার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২২
এনইউ/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।