ঢাকা: ভারত থেকে ফিরে যাওয়া রুশ জাহাজে থাকা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতিগুলো বাংলাদেশে আনার বিকল্প উপায় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। রূপপুরের যন্ত্রপাতি আনার দায়িত্ব রোসাটমের।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং রূপপুর প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নিয়ে ভারত থেকে রাশিয়ার যে জাহাজটি ফিরে গেছে সেটিতে থাকা যন্ত্রপাতিগুলো বাংলাদেশে নিয়ে আসার একাধিক রুট নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে রোসাটম। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন-রোসাটম রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের সব ধরনের যন্ত্রাংশ রাশিয়ায় তৈরি করে রূপপুরে আনা হচ্ছে। এসব যন্ত্রপাতি নিয়ে আসার দায়িত্বও রোসাটমের। রাশিয়া থেকে সমুদ্র পথে তাদের দায়িত্বেই রূপপুর প্রকল্পে আসছে যন্ত্রপাতিগুলো। জাহাজে যন্ত্রপাতি প্রথমে আসছে মোংলা বন্দরে। এরপর সেখান থেকে পদ্মা নদী দিয়ে রূপপুর প্রকল্প সংলগ্ন নদী বন্দরে আনা হয়। সেখান থেকে জিনিসপত্র বুঝে নেয় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটিতে রূপপুরের যে যন্ত্রপাতি আসছিল, সেগুলো আনার বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তবে এগুলো আনার উপায় কী হবে সে বিষয়ে রশিয়ার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে সূত্রগুলো জানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। রূপপুরের সব জিনিসপত্রই আসছে রোসাটমের দায়িত্বে। প্রকল্প এলাকায় আসার পর সেটা প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বুঝে নেন। যেহেতু একটা সংকট হয়েছে, তাই বিষয়টি নিয়ে রাশিয়া বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে, সে ক্ষেত্রে আমাদেরও দায়িত্ব আছে, আমরা খোঁজখবর ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও যোগাযোগ রাখছে।
এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, রাশিয়ার ফিরে যাওয়া জাহাজটিতে যে যন্ত্রপাতি ছিল তার ওজন ৫০ টনের কম। এগুলো টেকনিক্যাল ধরনের, সংযুক্ত কাজে ব্যবহারের যন্ত্রপাতি। যন্ত্রপতিগুলো কার্গো বিমানেও আনা সম্ভব। এ বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে সূত্রটি জানায়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোসাটমের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করার পূর্ণ দায়িত্ব আমাদের। প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ কাজ পূর্ণোদ্যমে এগিয়ে চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে আমরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পার্টনারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি, যার মধ্যে সর্বোত্তম লজিস্টিক্স রুট খুঁজে বের করাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গত ডিসেম্বরে রাশিয়ার জাহাজ ’উরসা মেজর’ রূপপুরের যন্ত্রপাতি নিয়ে বঙ্গপোসাগরে আসে। জাহাজটি ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিলো। জাহাজটি সম্পর্কে মার্কিন দূতাবাস থেকে আপত্তি জানানো হয় এবং বলা হয়, এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা রাশিয়ার স্পার্টা-৩ জাহাজ।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানার পর জাহাজটি মোংলায় ভিড়তে নিষেধ করা হয় এবং সেটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে ভেড়ে। সেখান থেকে ওই যন্ত্রপাতি খালাস করে বাংলাদেশে আনার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছিল। কিন্তু দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করার পর অনুমতি না পেয়ে গত ১৬ জানুয়ারি জাহাজটি ফিরে যায়। যদিও জাহাজটি গত ডিসেম্বরেই ভারতের কেরালার কচিন বন্দরে ভারতের পণ্য খালাস করে মোংলা বন্দরে আসছিল। ভারতের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা হয়নি। তবে রূপপুরের যন্ত্রপাতি আনার ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়নি বলে ওই সূত্র জানায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৩
এসকে/এমজেএফ