ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

চরম সঙ্কটেও থেমে নেই গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫১ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১২
চরম সঙ্কটেও থেমে নেই গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ

ঢাকা: সার কারখানা বন্ধ, সিএনজি স্টেশনে রেশনিং করেও চাহিদা মোতবেক গ্যাস সরবরাহ দেওয়া যাচ্ছে না বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ঠিক সে সময়েও থেমে নেই গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রক্রিয়া।

একের পর এক চুক্তি করা হচ্ছে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের।

২০১৬ সালে জুনের মধ্যে ৩ হাজার ২৮৪ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ১১টি গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে টেন্ডার শেষ হয়েছে।

আর এই প্রক্রিয়াকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা উচ্চাভিলাষি ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন এতে করে পিডিবি আরেকটি বিড়ম্বনায় পড়তে পারে। এখন যে ভাবে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে রেখে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা  হচ্ছে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

সেচ মৌসুম শেষ হলেও বিদ্যুতের লোডশেডিং থামাতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ( পিডিবি) আর লোডশেডিং ঠেকানোর জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশের প্রায় সবগুলো সার কারখানা।

শুধু যমুনা সারকারখানাকে ৪৫ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন ঘনফুট/দৈনিক) গ্যাস চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ৩৫ এমএমসিএফডি গ্যাস। পশাল ও ঘোড়াশাল সারকারখানা বন্ধ রয়েছে সেচ মৌসুমের শুরু থেকেই।

পেট্রোবাংলা সুত্র জানিয়েছে গত ৭জুন বৃহস্পতিবার তারিখে সার কারখানা গুলোর গ্যাসের চাহিদা ছিলো ২৩৭ এমএমসিএফডি। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ৬৬ দশমিক ৭ এমএমসিএফডি।

এদিন গ্যাসের ঘাটতির কারণে শিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট, চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট, হরিপুর ৩৬০ মেগাওয়াট, টঙ্গী ১০৫ মেগাওয়াট ও সিদ্ধিরগঞ্জ ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়।

এ ছাড়া টাঙ্গাইল, কুমিল্লাসহ অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাহিদার অর্ধেক অথবা একতৃতীয়াংশ গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

দীর্ঘদিনে ধরে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। শিল্পকারখানায় রেশনিং করা হচ্ছে। সরকার ক্ষমতায় আসার দেড় বছরের মাথায় ২০১০ সালের জুলাই মাস থেকে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।

আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধের আদেশে বলা হয়েছিলো দৈনিক ২হাজার ২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন না হওয়া পর্যন্ত আবাসিকে গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধ থাকবে। সরকারের সাড়ে তিন বছর পার হলেও যখন ২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন বাড়তে পারছে না।

ঠিক এই যখন অবস্থা তখন নতুন করে আরো ১১টি বড় বড় গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এছাড়াও আরো কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হচ্ছে সরকারি খাতে সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, বিবিয়ানা ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, কড্ডা গাজিপুর ১৫০মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট,  শাহাজীবাজার ৩০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, ঘোড়াশাল ৩০০-৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট।

বেসরকারি খাতে রয়েছে কালিয়াকৈর ১৪৯ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট,  কেরানীগঞ্জ ১৫০ মেগাওয়াট, ভোলা ( ইউনিট ২) ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, ফেঞ্চুগঞ্জ ১০০মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট।

এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাখা হয়েছে ডুয়েল ফুয়েল। অর্থাৎ ফার্নেস অয়েল অথবা গ্যাস দু’ধরনের জ্বালানি দিয়েই চলতে পারবে।
 
পিডিবির একটি সূত্র দাবি করেছে কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট হলে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রায় ২৫ এমএমসিএফডি এবং অন্য ক্ষেত্রে ১০০ মেগাওয়াটে ২৫ এমএমসিএফডি গ্যাস প্রয়োজন হয়।

এতে ডুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট রয়েছে  ২ হাজার ৮৩৫ মেগাওয়াট ও কম্বাইন্ড সাইকেল ছাড়া রয়েছে ৪৪৯ মেগাওয়াট।   এ হিসেবে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট দৈনিক গ্যাস প্রয়োজন পড়বে প্রায় ৬০০ এমএমসিএফডি।

পেট্রোবাংলা সুত্র দাবি করেছে বর্তমানে প্রায় ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাস ঘাটতি রয়েছে। যদিও পেট্রোবাংলার এই চাহিদার সঙ্গে অনেকের দ্বিমত রয়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লি. (বাপেক্স) এর এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তাদের এই পরিকল্পনা অবাস্তব। বাপেক্স আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রীকাইল, নেত্রকোনা, ও তিতাস গ্যাস ফিল্ডে ৩টি উন্নয়ন ক’প ও শালদা ও কৈলাশটিলায় ২টি ওয়ার্কঅভার কূপ খনন করা হবে।

এই ৫টি ক’প থেকে সর্বোচ্চ ১০০ এমএমসিএফডি বাড়তি গ্যাস পাওয়া সম্ভব।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আমরা যতটুকু পারবো ততটুকুই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তবে আরও কতগুলো আসছে সে বিষয়ে আমি জানি না। আমাদের কাছে আসলে তখন বলতে পারব।

দুই বছরে যখন ২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো যায়নি, সেখানে ২০১৫ সালের মধ্যে শুধু বিদ্যুৎ খাতেই বাড়তি প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো চিন্তা উচ্চাভিলাষি কিনা এমন প্রশ্নে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানান, পরিকল্পনা মতো কাজ হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

দেশীয় কোম্পানির বাইরে আইওসি কোম্পানির গুলোও ২০১৫ সালের মধ্যে আরও ৬০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছে।

পেট্রোবাংলার একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিভাগের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন খুবই কঠিন। তাদের মাস্টার প্লান অনুযায়ী গ্যাস দেওয়া সম্ভব নয়।

তিনি জানান, পেট্রোবাংলাকে না জানিয়ে ঘোড়াশাল ও আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগ ওই চুক্তিতে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে যদি গ্যাস সরবরাহ দিতে না পারে তাহলে পেট্রোবাংলা জরিমানা দিতে বাধ্য থাকবে।

অনুমতি ছাড়া এ ধরনের চুক্তির দায় পেট্রোবাংলা বহন করবে না বলেও দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।

পিডিবির চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন আমরা পরিকল্পনা মাফিক সব কাজ করে যাচ্ছি। বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১২
ইএস./সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।