ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

তুর্কমেনিস্তান থেকে চারগুণ বেশি দামে গ্যাস আনবে সরকার

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৭ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১২
তুর্কমেনিস্তান থেকে চারগুণ বেশি দামে গ্যাস আনবে সরকার

ঢাকা: তুর্কমেনিস্তান থেকে গ্যাস কিনতে চায় সরকার। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে সরকার টাপি (তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইন্ডিয়া) পাইপ লাইনে গ্যাসদাতা দেশ তুর্কমেনিস্তানের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।



বিষয়টিকে জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য খুবই জরুরি বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “এ ধরনের একটি আন্ত:দেশীয় গ্যাস পাইপ লাইনে যুক্ত থাকা বাংলাদেশের জন্য সুখকর হতে পারে। ”

এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এ আন্ত:মহাদেশীয় পাইপ লাইনে যুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে চিঠি দিয়েছে।  

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এডিবির জ্বালানি বিষয়ক পরিচালক রুন স্ট্রয়ামে গত ২ জুলাই বাংলাদেশকে টাপি সংযোগে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ই-মেইল করেন জ্বালানি উপ-সচিব আহমেদকে।

চিঠিতে গ্যাস সংযোগ লাইনের সদস্য দেশ হতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তুর্কমেনিস্তানকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবে বাংলাদেশকে কি পরিমান গ্যাস কিনবে, গ্যাসের কি ধরনের চাপ (প্রেসার) থাকবে সে ব্যাপারে উল্লেখ করতে বলেছে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ টাপিতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করে এডিবিকে অনুরোধ করেছিলো। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ মার্চ এডিবি তাদের বার্ষিক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়।

টাপি পাইপ লাইন থেকে ভারত প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস ১৩ ডলারে কিনবে। বাংলাদেশকে টাপি থেকে গ্যাস কিনতে হলে এ মূল্যের পাশাপাশি গ্যাস পরিবহন (হুইলিং চার্জ) বাবদ ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি গাইলকে (মধরষ) ৫০ সেন্ট করে দিতে হবে। এর বাইরে ভারতে গ্যাস ট্রানজিট ফি ধরলে সাড়ে ১৪ ডলারে বাংলাদেশকে প্রতি এমসিএফ গ্যাস কিনতে হবে। যা বাংলাদেশি কারেন্সিতে ১ হাজার ১৬০ টাকা প্রায়।

প্রতি পাঁচ বছর পর পর গ্যাসের দাম পুন:নির্ধারণ করা হবে।

বাংলাদেশ এখন বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস ২৮০ টাকায় কিনছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাপেক্সের কাছ থেকে কিনছে ২০ টাকা দরে। সেই একই পরিমান গ্যাস টাপি পাইপ লাইন থেকে কিনতে হবে সাড়ে এগারো শ’ টাকারও বেশি দিয়ে।

উল্লেখ্য, তুর্কমেনিস্তান থেকে ভারত পর্যন্ত দীর্ঘ ১ হাজার ৭৩৫ কিলোমিটার ৫৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইন নির্মাণ করা হবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৭ সালের অক্টোবরের মধ্যে এ পাইপ লাইন নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে মনে করছে টাপি পাইপ লাইন নির্মাতা দেশগুলো।

তুর্কমেনিস্তানের দৌলতাবাদ গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস পাইপ লাইন হেরাত-কান্দাহার হয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করবে।

তুর্কমেনিস্তানে ৫০০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুদ রয়েছে। প্রতিদিন টাপি পাইপলাইনে ৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করবে তারা। এর মধ্যে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারত ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট কিনে নেবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের ( জিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের মতামত দিতে বলেছে। আমরা শিগগিরই এ মতামত জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, টাপি গ্যাস পাইপলাইন সাহসিকতাপূর্ণ প্রকল্প, তবে তার নির্মাণ ও ব্যবহার সমস্যাবহুল। তুর্কমেনিস্তানের ভূভাগে দৌলতাবাদ খনি থেকে গ্যাস যাবে আফগানিস্তানের হেরাত, হেলমেন্দ ও কান্দাহার, তারপর পাকিস্তানে বেলুচিস্তানের কোয়েটা এবং পাঞ্জাবের মুলতান।

এসব অঞ্চল অশান্ত। আফগানিস্তানে ক্রমাগত যুদ্ধ চলায় এবং জঙ্গি অবস্থানের কারণে এ পাইপলাইনের শেষ বিন্দু পাক-ভারত সীমানার ফজিলকা শহরও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আর এ দু’দেশের মাঝে সম্পর্কও সহজ নয়। তাই এ পাইপলাইনের নিরাপত্তা ঝুঁকি খুবই বেশি বলে সম্প্রতি রাশিয়ার জাতীয় বিদ্যুৎশক্তি নিরাপত্তা তহবিলের ডিরেক্টর জেনারেল কনস্তানতিন সিমোনোভ এক রেডিও সাক্ষাতকারে উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১২
ইএস/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।