ঢাকা: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে বিদ্যুতে ভর্তুকির চাপ কমাতে বছরে চারবার এর দাম বাড়াবে সরকার।
গত বৃহস্পতিবার (২ মে) সচিবালয়ে আইএমএফের প্রতিনিধিদল বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বৈঠকের সময় সরকারের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়।
বৈঠকে আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী, আগামী তিন বছর এই প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ খাতে মোট ভর্তুকি কমিয়ে আনা হবে। এই সময়ে মোট ১২ দফায় বিদ্যুতের দাম নিয়ে আসা হবে উৎপাদন খরচের সমান বা কাছাকাছি।
ভর্তুকি কমানো মানে বিদ্যুতের দাম বাড়বে। খরচ কমিয়েও সরকার ভর্তুকি সমন্বয় করতে পারে বলে মনে করেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অনিয়ম, দুর্নীতি, অপচয় রোধ করে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া যেত।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম বলেন, মনে করি না যে আইএমএফের চাওয়া অনুযায়ী পুরোপুরিভাবে ভর্তুকি কমানো সম্ভব হবে। ভালো দিক যে তেল-গ্যাসে এখন ভর্তুকি নেই। তবে আমাদের মতো দেশে বিদ্যুতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকিকে বেশিই বলব। তারপরও গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যুতে ভর্তুকি দিতেই হবে।
আইএমএফের প্রতিনিধিদল গত বৃহস্পতিবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পেট্রোবাংলা ও বিপিসি প্রায় একইভাবে আইএমএফকে জানিয়েছে, গ্যাস ও জ্বালানি তেলে নতুন করে ভর্তুকির চাপ নেই। তেলের দাম নিয়ে স্বয়ংক্রিয় যে পদ্ধতি (আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে দেশে বাড়বে, কমলে কমবে) চালু করার কথা আইএমএফ বলেছিল, তা হয়েছে। প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। এতে জ্বালানি তেলে আর কখনো ভর্তুকি দিতে হবে না। প্রথম দুই দফায় দাম কিছুটা কমানো হলেও শেষ দফায় দাম বেড়েছে। তিন মাস ধরে এ চর্চা করা হচ্ছে।
আইএমএফ ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে। এ জন্য বাংলাদেশকে বেশ কিছু শর্ত পালন করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুসরণ করা শর্তের অন্যতম।
ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর দুই কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি বাংলাদেশ পেয়েছে। তৃতীয় কিস্তিতে ৭০ কোটি ডলার পাওয়ার কথা চলতি মে মাসে। ঋণের এ কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করছে। বৈঠক করছে সরকারের আর্থিক খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। তারই অংশ হিসাবে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে ওই বৈঠক করে তারা।
বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান। আইএমএফের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির গবেষণা বিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়, তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন করুক বা না করুক, চুক্তি অনুসারে প্রতিটি কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ (বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া) দিতে হয়। গত বছর ৪১ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অলস বসে ছিল। অলস বসিয়ে রেখে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ভাড়া দেওয়া হয়।
জবাবে বিদ্যুৎ বিভাগ আইএমএফকে জানিয়েছে, চুক্তি থাকায় ক্যাপাসিটি চার্জ দিতেই হবে। তবে সরকার ইতিমধ্যে ‘বিদ্যুৎ নেই, বিলও নেই’ পদ্ধতি চালু করেছে। নতুন করে চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি চার্জ বাদ দেওয়ার সুযোগ আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৮ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২৪
জেডএ/এইচএ/