লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রায় চার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের। নিয়মিত বিল পরিশোধ না করায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া পড়ে আছে।
বিল আদায়ে মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুটি সংযোগ কেটে দেন পিডিবির লোকজন। পরে তিনটি মিটার সংযোগের বিপরীতে আংশিক ২৭ লাখ টাকা বকেয়া পরিশোধ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুটি মিটারের সংযোগ আবার দেওয়া হয়। এছাড়া এক মাসের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করবে বলে মুচলেকা দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে পিডিবির লোকজন পৌরসভার পুরোনো গো-হাটা সড়কে পানির পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ এবং পৌর আধুনিক বিপণিবিতানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে ওই দুটি সংযোগ এবং পৌর সুপার মার্কেটের মিটার সংযোগ বাবদ বকেয়া বিলের মধ্যে ২৭ লাখ টাকা জমা দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। বিকেলের দিকে বিচ্ছিন্ন থাকা দুটি মিটার আবার চালু করে দেয় পিডিবি।
এদিকে দীর্ঘ সময় পানির পাম্পের বিদুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সাময়িক সময়ের জন্য পৌরসভার একাংশে পানির সংকট দেখা দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বিভিন্ন বিদ্যুৎ মিটারের বিপরীতে পিডিবি চার কোটি ২১ লাখ টাকা বকেয়া পাওয়া ছিল। বিভিন্ন সময়ে বিল পরিশোধে পৌরসভাকে তাগাদা দেয় পিডিবি। কিন্তু বিষয়টি আমলে নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ।
গোডাউন সড়কের পানির পাম্পের যে মিটার সংযোগটি রয়েছে, তাতে গেল বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া ছিল ৭৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪২০ টাকা। পরে ওই মাসে পৌরসভা তিন লাখ টাকা বিল পরিশোধ করে। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ওই মিটারে বিলের বকেয়া দাঁড়ায় ৮৯ লাখ ৭ হাজার ১৮৪ টাকা। পৌর আধুনিক বিপণিবিতানের বকেয়া জমা হয়ে আছে ১৮ লাখ ৯০ হাজার ২৫৭ টাকা। আর পৌর সুপার মার্কেটের বকেয়া প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
গত ২৬ মে বকেয়া পরিশোধে জন্য পৌরসভাকে সর্বশেষ নোটিশ দিয়েছে পিডিবি। বিল পরিশোধের সময়সীমা দেওয়া হয় ৬ জুন পর্যন্ত। কিন্তু বিল পরিশোধ না করায় মঙ্গলবার দুটি সংযোগ কেটে দিলে তিনটি সংযোগের বকেয়ার বিপরীতে মাত্র ২৭ লাখ টাকা পরিশোধ করে পৌরসভা। বর্তমানে বকেয়ার পরিমাণ তিন কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় হতবাক পৌর এলাকার বাসিন্দারা। এছাড়া পৌরসভার মালিকানাধীন ওই দুটি মার্কেটের দোকান যারা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন, তারা ক্ষোভ করে জানান, তারা ঘর ভাড়ার সঙ্গে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ করেন। কিন্তু পৌরসভার পক্ষ থেকে পিডিবি অফিসে নিয়মিত বিল পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল আমিন বলেন, বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার বিষয়ে আমরা কয়েক দফা চিঠি দিয়েছি। এরপরও বিল পরিশোধে তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সেজন্য লাইন কেটে দেওয়া হয়েছিল। পরে বিল পরিশোধের নিশ্চয়তা দেওয়ার পর আবার সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে সব মিলিয়ে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বকেয়া বিল রয়েছে। এর মধ্য তিন কোটি ৯৬ লাখ টাকা লক্ষ্মীপুর পৌরসভার। বাকি ৪৬ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ টাকা সরকারি অফিসের এবং বেসরকারি খাতের (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
বকেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই পৌরসভার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর কিছু কিছু বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২৪
এসআই