ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

জ্বালানি সংকট নিরসনে সিলেটে নতুন তেল কূপ খনন করবে সরকার

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৪
জ্বালানি সংকট নিরসনে সিলেটে নতুন তেল কূপ খনন করবে সরকার

ঢাকা: দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এবং আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে সরকার নতুন করে তেল কূপ খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) সিলেট-১২ নামে একটি তেল কূপ খনন প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে।

 

নতুন এই প্রকল্পটির জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫৬ কোটি টাকা, যা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ ব্যারেল তেল উৎপাদন হবে। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় 'সিলেট-১২ নম্বর কূপ (তেল কূপ) খনন' নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।  

প্রকল্পটি নিয়ে আগামী ২৭ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনে শিল্প ও শক্তি বিভাগের সম্মেলন কক্ষে প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান। সবকিছু ঠিক থাকলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলার আওতাধীন সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) কর্তৃক ২৫৬ কোটি ১৯ লাখ টাকায় অক্টোবর ২০২৪ থেকে জুন ২০২৬ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করবে।  

জানা গেছে, তেলের সম্ভাবনা ও প্রকল্পের পরিকল্পনা সিলেট-১০ নম্বর কূপ খননের সময় মাড লগ এবং ওয়্যারলাইন লগ বিশ্লেষণে তেল ও গ্যাসের উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই সিলেট-১২ তেল কূপ খননের প্রস্তাব করা হয়েছে। Geological Technical Order (GTO) অনুযায়ী, আপার বোকাবিল এবং লোয়ার বোকাবিল অঞ্চলে খনিজ সম্পদের সম্ভাবনা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই এলাকায় প্রায় ১৫-২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুদ থাকতে পারে।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, "প্রকল্পটি সফল হলে দেশীয় উৎস থেকে তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের জ্বালানি চাহিদার আংশিক মেটাতে সহায়ক হবে। " 

পাশাপাশি, প্রকল্পটি আমদানি নির্ভরতা কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা করছেন। প্রকল্পটি সফল হলে ভবিষ্যতে আরও একটি তেল এবং একটি গ্যাস কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনায় কিছু সুপারিশ করেছে। তাদের মতে, যানবাহন ভাড়া ও পরিবহন ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে হ্রাস করা যেতে পারে। এছাড়া, বিদেশি পরামর্শকের পরিবর্তে দেশীয় পরামর্শক অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা ব্যয় সাশ্রয় করতে সহায়ক হবে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো সক্রিয় তেল কূপ নেই। সিলেটে তেলের সম্ভাব্য মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে এবং এ বিষয়ে এখনও পরীক্ষা চলছে। দেশে বর্তমানে বছরে তেলের চাহিদা প্রায় ৭২ লাখ মেট্রিক টন, যার প্রায় পুরোটা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। অল্প পরিমাণ তেল দেশের বেসরকারি পাঁচটি রিফাইনারি থেকে আসে।

বাংলাদেশের প্রথম তেল কূপ থেকে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত মোট ৫ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদিত হয়েছিল। এ কারণে, নতুন তেল কূপ খননের এই উদ্যোগ দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে, এই প্রকল্পটি দেশের জ্বালানি খাতকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৪
এসএমএকে/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।