ঢাকা: শীতকালে কম চাহিদা থাকার পাশাপাশি বকেয়া পরিশোধের জেরে তিন মাস ধরে সক্ষমতার অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করছে ভারতের আদানি গোষ্ঠী। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পুরো সরবরাহ চেয়েছে।
২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আদানির সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি করে। ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যে গোষ্ঠীটির একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে বিল পরিশোধে দেরি হওয়ায় আদানি গত ৩১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে। ফলে ১ নভেম্বর একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। পরে বাংলাদেশ আদানিকে অর্ধেক সরবরাহ বজায় রাখতে বলে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানায়, বকেয়া পরিশোধে তারা প্রতি মাসে আদানিকে ৮৫ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে। এখন আদানিকে দ্বিতীয় ইউনিট চালু করে বিদ্যুতের সম্পূর্ণ সরবরাহ পুনরায় চালু করতে বলেছে।
প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সোমবার দ্বিতীয় ইউনিটটি পুনরায় চালু করা যায়নি উল্লেখ করে বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্সকে বলেন, আমাদের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী তারা (আদানি) দ্বিতীয় ইউনিট চালুর পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু উচ্চ কম্পনের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে প্রতি মাসে আদানিকে ৮৫ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছি। আমরা আরও দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো বকেয়া পরিশোধ কমানো। এখন আদানির সঙ্গে তেমন কোনো বড় সমস্যা নেই।
বিপিডিবি ও আদানির কর্মকর্তারা সম্প্রতি একটি বৈঠকের পর মঙ্গলবার আরও একটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে বসার কথা রয়েছে, যেখানে তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি ব্যক্তি বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি।
আদানি পাওয়ারের একজন মুখপাত্রের কাছে এ নিয়ে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কোনো জবাব দেননি। গত ডিসেম্বর মাসে আদানির একটি সূত্র জানিয়েছিল, বিপিডিবির কাছে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে। তখন বিপিডিবি চেয়ারম্যান দাবি করেছিলেন, প্রকৃত বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার।
বিদ্যুতের দামের হিসাব নিয়ে আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ রয়েছে। রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, প্রায় ৫৫ শতাংশ বেশি অর্থে বাংলাদেশের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বাংলাদেশের একটি আদালত আদানির সঙ্গে চুক্তি পর্যালোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কমিটির প্রতিবেদন চলতি মাসের মধ্যে প্রকাশিত হওয়ার কথা। এতে চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
গত বছর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আদানির বিরুদ্ধে চুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগ তোলে। অভিযোগ অনুযায়ী, ঝাড়খন্ডে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য আদানি দিল্লির কাছ থেকে যে শুল্ক–সুবিধা পেয়েছিল, তা থেকে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি। গত বছরের ডিসেম্বরে রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা তখন চুক্তিটি পর্যালোচনা করার কথা জানান।
আদানির একজন মুখপাত্র তখন রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির সব শর্ত রক্ষা করছে। ঢাকার পক্ষ থেকে চুক্তি পর্যালোচনার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
দুই পক্ষের মতপার্থক্য সমাধান হয়েছে কি না, সেই সম্পর্কে কিছুই বলেননি বিপিডিবি চেয়ারম্যান।
গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা আদানি গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি এবং আরও সাত নির্বাহীর বিরুদ্ধে ভারতে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা করেন। তবে আদানি গ্রুপ এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে।
সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই করা বড় ধরনের জ্বালানি চুক্তিগুলো পর্যালোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে, ছাত্র আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান হাসিনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫
আরএইচ