ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

‘সরকার জোর করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবে না’

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৪
‘সরকার জোর করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবে না’

চট্টগ্রাম থেকে: জনগণ না চাইলে মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। দক্ষিণাঞ্চল সফরের শেষ দিন রোববার ইস্টান রিফানারী পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।



প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হাব তৈরি করতে চায়। এখানে শুধু ৩ হাজার মেগাওয়াট নয় ভবিষ্যতে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

কিন্তু সবটাই নির্ভর করছে স্থানীয় জনগণের ইচ্ছার উপর। তারা যদি না চায় তাহলে  সরকার জোর করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবে না বলেও মন্তব্য করেন নসরুল হামিদ।
তিনি আরও বলেন, মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে এই এলাকার চেহারা পাল্টে যাবে। নতুন প্রজন্মকে তাদের আদি পেশার উপর নির্ভর করতে হবে না। তারা চাকরি পাবে। বর্তমান প্রজন্ম প্রকৌশলী-ডাক্তার হতে পারবে। এখন তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা আদি পেশায় (লবন চাষের শ্রমিক) থাকবে না-কি জীবনকে উন্নত করে গড়ে তুলবে।

যারা এই প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদেরকে পুর্নবাসন করার গ্যারান্টি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। যা করছে জনগণের জন্যই করছে। তাই জনগণের ক্ষতি করে কিছু করা হবে না।
 
প্রতিমন্ত্রী বলেন. মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি গভীর সমুদ্র বন্দর, সিঙ্গেল মুরিং টার্মিনাল(সাগরে জ্বালানি তেল আমদানির ডিপো) নির্মাণ করা হবে। এর পাশাপাশি এখানে স্কুল কলেজ, হাসপাতালসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে।
 
সরকার মহেষখালীকে ঘিরে ব্যাপক উন্নয়ন পথ নকশা তৈরি করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়েকে রেললাইন স্থাপনের জন্য বলা হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
 
নসরুল হামিদ বলেন, এসব মেগা উন্নয়ন প্রকল্পে অনেক দাতা সংস্থা ও দেশেই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। অর্থের কোনই সমস্যা নেই। এখন শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা।
 
সাগর মোহনা মাতারবাড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর‌্য ও পরিবেশ রক্ষা করেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হবে উল্লেখ করে বলেন, ‘পরিবেশের বিষয়ে কোন ছাড় দিচ্ছে না সরকার। এখানে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল (অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর) কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হবে। পরিবেশের ক্ষতি হবে না। ’
 
মাতারবাড়িতে প্রথম ধাপে আমদানি নির্ভর কয়লা দিয়ে ১২ থেকে ১৪‘শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে সরকার। আগামী মাসেই সরকারি একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে বিদ্যুৎ বিভাগ।

এ জন্য প্রায় ৬ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জনবসতিহীন এই জমিগুলোর বেশিরভাগেই সরকারি মালিকানাধীন। কিছু রয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন। এসব জমিতে শুষ্ক মৌসুমে লবন আর বর্ষায় চিংড়ি চাষ হয়।
 
স্থানীয়দের একটি গ্রুপ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে এখানে লবন চাষ করেই আমাদের জীবন জীবিকা চলছে। লবন চাষ বন্ধ হয়ে গেলে শ্রম বিক্রির জায়গা বন্ধ হয়ে যাব। তারা বেকার হয়ে পড়বেন।
 
প্রতিমন্ত্রী স্থানীয়দের বক্তব্য শুনে তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এসেছিলাম। মতামত জানার জন্য। আমি আবারও আসব সকলের মতামত এবং সকলকে সঙ্গে নিয়েই মহেষখালীর উন্নয়ন করতে চাই। ’
 
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এখন অর্থ নয়, বড় সমস্যা হচ্ছে দক্ষ জনবলের। আমাদের আর্থিক সক্ষমতা বেড়েছে কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সক্ষমতা সে তুলনায় বাড়েনি।
 
প্রতিমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম, যুবলীগ নেতা এনআই সৈকত, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইকবাল প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।