ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সায় দিয়েছে ভারত, এবার নেপাল থেকে বিদ্যুৎ

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৪
সায় দিয়েছে ভারত, এবার নেপাল থেকে বিদ্যুৎ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: নেপালে ৮০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করার সুযোগ করেছে। আর সেই সোর্সকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ।

নেপাল সম্মতি দিয়েছে অনেক আগেই। তারা জি টু জি (সরকার টু সরকার) ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বাংলাদেশে রপ্তানীতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে।

এই পথে বাঁধা ছিলো ভারত, সেই বাধাও দূর হয়েছে। ভারত সম্মতি দিয়েছে তাদের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে। শিগগিরই চতুর্দেশীয় (বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান-ভারত) বৈঠক হবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
 
এমনি প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার ৩ দিনের সফরে বাংলাদেশ আসছেন নেপালের জালানী মন্ত্রী রাধা কুমারী গাওয়ালি। এই সফরকে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন নসরুল হামিদ।
 
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নেপালের যে রিসোর্স রয়েছে তা কাজে লাগাতে পারলে দু’দেশেই লাভবান হবে। বাংলাদেশ-নেপাল আগ্রহী, কিন্তু সমস্যা ছিলো ভারতের ভূ-খণ্ড ছাড়া এই বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব নয়। এতদিন ভারতের সম্মতি ছিলো না। এখন তারা সায় দিয়েছে তাই এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা।

বিদ্যুৎ বিভাগের(বাংলাদেশ)পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, অনেক আগে থেকেই নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ-নেপালের যুগ্মসচিব পর্যায়ে বৈঠকে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, নেপালে যৌথ বিনিয়োগে জল বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প ও জ্ঞানের আদান প্রদানের বিষয়ে আলোচনা হয়।
 
বিষয়টিতে ভারতের সায় ছিল না। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ স্টিয়ারিং কমিটিতে একাধিকবার তোলার চেষ্টা করা হয়। সেখানে ভারত বাঁধা দিয়ে আসছিলো। কিন্তু সম্প্রতি ভারত ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছে। তারা বলেছে চতুর্দেশীয় বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
 
বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে আলোচনা অব্যহত রাখার পাশাপাশি নেপালের সঙ্গে বিষয়টি চুড়ান্ত করে রাখতে চাইছে। নেপালের জ্বালানি মন্ত্রীর সফরকালে এই বিষয়ে একটি সমঝোতা স্বারক সই হতে পারে বলে জানিয়েছেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক।
 
নেপালের জ্বালানী মন্ত্রী রাধা কুমারী গাওয়ালী এক সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন। এসময় তার সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানি এবং যৌথ বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হবে। বুধবার বেলা ১১টায় হোটেল সোনারগাঁয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। বৈঠকে নেপালের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন রাধা কুমারী গাওয়ালী অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন বিদ্যুৎ জ্বালানী এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
 
এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করবেন নেপালের জ্বালানি মন্ত্রী। সমঝোতার আলোকে নেপাল-বাংলাদেশের সচিব পর্যায়ে একটি যৌথ স্ট্রিয়ারিং কমিটি এবং একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি দুই দেশের বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে বিভিন্ন বিষয় সুপারিশ করবে।   একই ধরনের কমিটি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে।
 
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, নেপাল ৮০ হাজার মেগাওয়াটের জল বিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলে মাত্র ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। বিনিয়োগ অভাবে দেশটির রাজধানী কাঠমুন্ডুতেই দৈনিক ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়।
 
নেপাল রাজনৈতিক অস্থিরতা চলায় এতদিন বিনিয়োগকারিরা সম্মত হচ্ছিল না। এখন এই অস্থিরতা কমে গেছে। অন্যদিকে নেপাল সরকার বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে চাইছে। নেপাল সরকার চাইছে দ্রুত বিদ্যুত প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করতে। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার চিন্তা করছে।
 
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর নেপালে দু’টি বিদ্যুৎ প্রকল্প করছে। একটি আপার(উজান) কর্নালী এবং অন্যটি আপার মাছরাঙ্গি। এর একটি ৫০০ মেগাওয়াট অন্যটি ৬২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। জিএমআর বাংলাদেশের কাছে এই বিদ্যুৎ বিক্রির প্রস্তাব দিলে বাংলাদেশ ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয়ের সম্মতি জানিয়েছে।
 
প্রকল্প দুটির বিদ্যুৎ সঞ্চালনে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংকের গ্রুপ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি)। এরইমধ্যে এই প্রকল্প দুটি অনেকদূর এগিয়েছে। তৃতীয় কোন দেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করার বিষয়ে আইএফসির এক ধরনের চাপ রয়েছে। আইএফসি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রির বিষয়ে জিএমআর এর সঙ্গে মধ্যস্ততা করছে।
 
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ভারতের অনেক বড় বড় কোম্পানি এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। তারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে নেপালের চাহিদা অনেক কম তাদের দিক থেকেই বিদ্যুৎ রপ্তানীতে আপত্তি নেই।
 
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি শিগগিরই এই জটিলতা দূর হয়ে যাবে। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।
 
বাংলাদেশের পাওয়ার সেক্টরের মাস্টার প্লান অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক নেপাল থেকেই এর চেয়ে অনেক বেশি আমদানির সুযোগ রয়েছে। তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে জলবিদ্যুৎ আমদানি অথবা নেপালে বিনিয়োগ বাংলাদেশের জন্য অনেক সাশ্রয়ী হতে পারে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।