ঢাকা: মুনাফার ভাগ নিতে টানাটানির উদাহরণ অনেক থাকলেও, লোকসানের ভাগ নিতে অনীহা থাকে সবারই। কিন্তু এবার লোকসান নিতেও টানা-হেচড়া শুরু করেছে খোদ দু’টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি।
কোম্পানি দু’টি হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
কোম্পানি দু’টি সিস্টেম লস (সঞ্চালন লোকসান) ২.৭৬ শতাংশ নিজের খাতায় যোগ করেছে। বিপিডিবি এই লোকসান ধরে বিদ্যুতের পাইকারি দাম আর পিজিসিবি হুইলিং চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
বুধবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে বিষয়টি নজরে আনা হয়।
বিষয়টি বিইআরসির নজরে আনেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলী আমিনুর রহমান।
তিনি বলেন, একই লোকসান দু’টি কোম্পানি নিজের হিসেবে ধরে দাম কষছে। এতে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ বিষয়টির সুরাহা হওয়ার প্রয়োজন। এ তথ্য জেনে গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা বিস্ময় প্রকাশ করেন।
তবে বিষয়টিকে কেউ পুকুরচুরি, কেউ ছলচাতুরি বলেও মন্তব্য করেন। অনেকে প্রশ্ন তোলেন আসলে লোকসানটা কার পকেট থেকে যাচ্ছে এখন। আর কেনইবা দু’টি কোম্পানিই এই লোকসান দেখিয়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
পিজিসিবি ১৩২ কেভি লাইনে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের হুইলিং চার্জ ৩৮.৭৩ পয়সা ও ৩৩ কেভি’তে ৩৮.৯৬ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে যথাক্রমে ২২.৬৮ ও ২২.৯১ পয়সা হারে আদায় করছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে দাম বাড়ানো না হলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৮১৮ কোটি টাকা লোকসান হবে। আর তেমনটি হলে সরকার ও দাতা সংস্থার ঋণের টাকা সময়মত পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১৮.১২ শতাংশ অর্থাৎ ইউনিট প্রতি ৮৫ পয়সা বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। বিইডিবি’র প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমানে তাদের পাইকারি বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ, ২.৭৬ শতাংশ লোকসান ও সরবরাহ খরচসহ ইউনিট প্রতি মূল্য পড়ছে ৬.৫৪ টাকা। আর তারা পাইকারি দাম নিচ্ছেন ইউনিট প্রতি ৪.৬৭ টাকা।
এই শুনানি গ্রহণকালে বিইআরসি চেয়ারম্যান এআর খান বলেন, কমিশন বিষয়টি যাচাই করে দেখবে।
ভবিষ্যতে হয়তো অ্যানার্জি অডিট ছাড়া কোনো কোম্পানির বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না বলে মন্তব্য করেন বিইআরসি চেয়ারম্যান। এ সময় পিজিসিবিকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, আপনাদের অনেক প্রকল্প কাজে লাগছে না, এমন প্রকল্প কেন গ্রহণ করা হয়েছে। টাকায় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে তা জনগণের টাকা। অতএব জনগণের মতামত নিতে হবে। জনগণের অথরিটি হচ্ছে বিইআরসি। ভবিষ্যতে নতুন কোনো প্রকল্প নিতে হলে বিইআরসির মতামত নেওয়ার নির্দেশনা দেন বিইআরসি চেয়ারম্যান।
অন্যদিকে, পিজিসিবিকে সিসটেম লস কমানো ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ (১৫ শতাংশ) ব্যয় অস্বাভাবিক মন্তব্য করে কমানোর তাগিদ দেয় বিইআরসি।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫