ঢাকা: ‘শামসুল আলমের প্রশ্নবানে তিতাস জর্জরিত, কমিশন জর্জরিত, আর পেট্রোবাংলা আতঙ্কিত। খাদের কিনারে নিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করছেন।
মঙ্গলবার (৩ ফেব্রুয়ারি) টিসিবি অডিটরিয়ামে তিতাসের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে অধ্যাপক শাসমুল আলমের জেরা প্রসঙ্গে বিইআরসি চেয়ারম্যান এআর খান এমন মন্তব্য করেন।
এ সময় তিতাস ও পেট্রোবাংলার কর্তারা মুখ গোমরা করে বসে থাকলেও ভোক্তারা হাত তালি দিয়ে সমর্থন জানান।
তিতাসের পরিচালক (অর্থ) বলেন, সরকার গ্যাসের পণ্যমূল্য প্রতিহাজার ঘনমিটার ২৫ টাকা করার নির্দেশ দিয়েছে। সে কারণে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সরকারের এই নির্দেশনা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি বলেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গ্যাসের পণ্যমূল্য নির্ধারণের জন্য এই চিঠিটি দিয়েছে পেট্রোবাংলাকে।
তিতাস গ্যাস পেয়েছে কি-না? তিতাসের পরিচালক অর্থ বলেন, তাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়নি, এমনকি হোল্ডিং কোম্পানি হিসেবে পেট্রোবাংলাও চিঠি দেয় নি। মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু দফায় দফায় প্রশ্ন করা হলেও ঠিক কে নির্দেশ দিয়েছেন তা জানাতে অস্বীকার করে তিতাস গ্যাস।
এ পর্যায়ে শামসুল আলম জানতে চান, আপনি দারোয়ান না-কী পিয়নের কাছে নির্দেশনা পেয়েছেন। আর কেনই বা জানাতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। তার এই বক্তব্যে মাথা নিচু করে থাকেন তিতাস এমডিসহ অন্যরা।
কোন উত্তর না পেয়ে শামসুল আলম বলেন, ‘আপনি মৌখিক কোন নির্দেশনায় এই প্রস্তাব আনতে পারেন না। আপনার প্রস্তাবের কোন ভিত্তি নেই। এই প্রস্তাব ভুতুড়ে। এর কোন যৌক্তিকতা নেই। তিতাস কি-আমার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত। ’
জবাবে তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রস্তাবে অসামঞ্জস্য রয়েছে। জবাবে শামসুল আলম বলেন, অতীতে এভাবে অনেক ওহি নাজিল হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এটাও তেমনি একটি বিষয়।
শামসুল আলম বলেন, ২০০৩ সালে গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণের ফর্মুলা দিয়েছে সরকার। তাতে বলা হয়েছে গ্যাসের ক্রয়/উৎপাদন মূল্য+ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয়+ সম্পূরক শুল্ক+মূল্যসংযোজন কর= ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য। এই ফর্মুলা বলবত রয়েছে।
গ্যাসের ক্রয়/উৎপাদন মূল্য+ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয়+ সম্পূরক শুল্ক+মূল্যসংযোজন কর বাড়েনি বা বাড়ানোর প্রস্তাবনা নেই সরকারের। তাহলে কোন যুক্তিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রশ্নের জবাবেও তিতাস গ্যাসের এমডি নওশাদ ইসলাম স্বীকার করেন, কিছুটা অসামঞ্জস্য রয়েছে।
তিতাসের প্রস্তাবনায়, কোম্পানির পরিচালন ব্যয়, কতদামে গ্যাস কেনা হচ্ছে। কত মুনাফা করছে এসব কোন তথ্যই দেওয়া হয় নি। প্রশ্ন করলেও সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হয় তিতাস। যে কারণে কমিশনের সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই সব হিসেব জমা দেওয়া উচিত ছিলো।
ড. নুরুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বর্তমানে মাত্র সাড়ে ৪ হাজার প্রি-পেইড মিটার রয়েছে। আরও ২ লাখ মিটার ২০২২ সালের মধ্যে স্থাপন করা হবে। এরপর অন্য একটি প্রজেক্ট প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাতে আরো ৪ বছর সময় লাগবে।
বিস্ময় প্রকাশ করে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, হিসেব অনুযায়ী আগামী ১০ বছর পর গ্যাস শেষ হবে। তাহলে ২০২৬ সালে মিটার বসিয়ে লাভ কি। তখন তো গ্যাসই থাকবে না।
বিইআরসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, আপনারা মিটারে মনোপলি করেন কেন। মিটার উন্মুক্ত করে দেন জনগণ কিনে লাগাবে। আপনারা সবার বোঝা মাথায় নেন কেন।
ড. নুরুল ইসলাম তিতাসের প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন, তারা এমনভাবে প্রস্তাবনা দিয়েছে যাতে কেউ না বুঝতে পারে। আমার মনে হয় মানুষ যাতে বুঝতে না পারে তারা বুঝে শুনেই এমন প্রস্তাব করেছে।
সম্প্রতি গ্যাংস সংযোগের ক্ষেত্রে আবাসিকে (এক চুলা) ৪’শ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা, দুই চুলা ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (তিতাস গ্যাস)।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫
** আবাসিকে গ্যাসের দাম ১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব