ঢাকা: প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে তিতাস ৫৫ পয়সা লাভ করছে। গ্যাসের পণ্যমূল্য বসানো হলেও তাদের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন।
অন্যদিকে একই হারে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিলো পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড(পিজিসিএল)। বিদ্যমান দরে তাদের বাড়ানো প্রয়োজন নেই। গ্যাসের পণ্য মূল্য (প্রস্তাবিত প্রতি হাজার ঘনফুট ২৫ টাকা) নির্ধারণ করা হলে ৫.৫৯ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়বে।
এমন মত দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের(বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।
মঙ্গলবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ানবাজার টিসিবি মিলনায়তনে গণশুনানিতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (তিতাস গ্যাস) ও পিজিসিএল’র দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ‘দাম বাড়ালে সরকার বিপদে পড়বে। দয়া করে সরকারকে বিপদে ফেলবেন না’।
কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি তিতাসের প্রস্তাবের বিশ্লেষণ করে জানায়, তিতাস ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অবৈধ গ্রাহকদের থেকে ১৭০ মিলিয়ন টাকা আয় করেছে। যা গ্যাস বিক্রি খাতে না দেখিয়ে অপারেশনাল আয় দেখিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়েছে।
তিতাস ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কর পরবর্তী নিট মুনাফা করেছে ১ হাজার ২৬ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মুনাফার ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য প্রতি ঘনমিটারে ২৯ পয়সা প্রয়োজন। বর্তমানে ৯৭ পয়সা আয় করছে। এর মধ্যে প্রতি ঘনমিটারে বিতরণ রেট (মার্জিন) থেকে ৫৫ পয়সা এবং ৪২ পয়সা পরিচালন আয়, এফডিআর সঞ্চালন আয় থেকে।
যে কারণে পণ্য মূল্য নির্ধারণ করা হলেও তিতাসের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়বে না।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, তিতাস এখনই মুনাফা করছে। বেতনের বাইরে কর্মচারীরা প্রফিট বোনাস হিসেবে ২ লাখ টাকার মতো পাচ্ছেন। একইসঙ্গে শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ পাচ্ছেন।
দাম বাড়ালে সেই টাকা কর্মচারী ও ১৬ হাজার শেয়ারহোল্ডারের পকেটে চলে যাবে। এ কারণে দাম বাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে উস্কে না দেওয়ার আহবান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ২০১২ সালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সময় গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছিলো। তখন বলা হয়েছিলো, এ টাকা গ্যাস উত্তোলনের জন্য অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই টাকা ৩ শতাংশ হারে সুদে খাটাচ্ছে পেট্রোবাংলা। আর সেই সুদের কারণে গ্যাসের উত্তোলন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
পেট্রোবাংলা এ কাজ করতে পারে না। তারা এ তহবিলের তছরূপ করছে। যারা এ ফান্ডের তছরূপ করেছেন, তাদের শাস্তি দিতে হবে। এ তহবিলের টাকার ওপর স্থিতিবস্থা জারি করারও অনুরোধ জানান শামসুল আলম।
তিনি বলেন, পেট্রোবাংলা দুর্বৃত্তদের দখলে চলে গেছে। এটা আমাদের প্রতিষ্ঠান। আমাদের দখলে নিতে চাই।
বিইআরসি’র চেয়ারম্যান এ আর খান, সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন, রহমান মুরশেদ ও মাকসুদুল হক গণশুনানি পরিচালনা করেন।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে গ্যাস ব্যবহারে বিভিন্নভাবে বৈষম্য আছে। বৈষম্যের কারণে পণ্য উৎপাদন খরচে পার্থক্য হচ্ছে। এ পার্থক্যের সমন্বয় হওয়া উচিত।
বিইআরসি’র চেয়ারম্যান বলেন, ২৪ ঘণ্টা চুলা জ্বালিয়ে রাখলেও মাসে ৪৫০ টাকা বিল আসে না।
আবাসিকে (এক চুলা) ৪শ’ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা, দুই চুলা ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ খাতে প্রতি হাজার ঘনমিটার গ্যাসের বর্তমান দর ৭৯.৮২ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮৪ টাকা, সার উৎপাদনে ৭২.৯২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১১৮.২৬ টাকা থেকে ২৪০ টাকা, বাণিজ্যিকে ২৬৮.০৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা, চা বাগানে ১৬৫.৯১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা, সিএনজিতে ৮৪৯.৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ১৩২.৬৭ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বুধবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বাখরাবাদ ও কর্ণফুলি গ্যাস কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫
** আবাসিকে গ্যাসের দাম ১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব
** পেট্রোবাংলা আতঙ্কিত !
** গ্যাসের হুইলিং চার্জ ৪৭ পয়সা করার প্রস্তাব