ঢাকা: একটি রিগ পরিচালনায় ট্রেইনি ড্রিলার প্রয়োজন ৫ জন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সে (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি) ৫টি রিগের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ২ জন।
তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির ট্রেইনি ডিলার পদ রয়েছে ২০টি। যার ১৮টিই শূন্য পড়ে আছে। একই অবস্থা বাপেক্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ খনন বিভাগের। যাকে বাপেক্সের মূল চালিকা শক্তি ধরা হয়। সেই বিভাগের এই গুরুত্বপুর্ণ পদটি অনেকদিন ধরেই শূন্য পড়ে আছে।
খনন বিভাগে বর্তমানে যে অর্গানোগ্রাম রয়েছে তা পুরনো দু’টি রিগের জন্য তৈরি। নতুন তিনটি রিগ যুক্ত করা হলেও অর্গানোগ্রাম সংশোধন করতে পারেনি রাষ্ট্রীয় কোম্পানিটি। ১০৪ টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৪৭ জন।
খনন বিভাগে অনুমোদিত ২২টি ম্যানেজার পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন, ডেপুটি ম্যানেজার ২৪টি পদের বিপরীতে আছেন ১৩ জন, ২৩ সহকারী ম্যানেজারের বিপরীতে রয়েছেন ১২ জন। মূলত এই চারটি পদের লোকজনই খনন কাজে সার্বক্ষণিক মাঠে অবস্থান করেন। সেই বিভাগের এই দুরবস্থার কথা জানিয়েছেন বাপেক্সের জেনারেল ম্যানেজার (খনন) সাহাবুদ্দিন আহমেদ।
অথচ নতুন করে যখন তিনটি রিগ কেনা হয় তখন বলা হয়েছিলো দেশের পাশাপাশি বহুজাতিক কোম্পানির সাথেও কাজ করবে বাপেক্স। এমনকি অদূর ভবিষ্যতে দেশের সীমানার বাইরে গিয়েও কাজ করবে। সেই স্বপ্ন নিয়েই বাপেক্সের বহরে যুক্ত করা হয় নতুন তিন রিগ।
যখন কূপ খনন শুরু হয়, কাজ চলে বিরামহীন ভাবে। ২৪ ঘণ্টাই সচল রাখতে হয় রিগ। দু’টি শিফটে ভাগ করে কাজ করতে হয়। যে কারণে একটি রিগ পরিচালনার জন্য কমপক্ষে ১৭ জন লোক প্রয়োজন হয়। কিন্তু লোকবলের অভাবে ঋণের টাকায় কেনা রিগগুলো কর্মহীন থাকছে অনেক সময়। অন্যদিকে সুদসহ ঋণের টাকা গুণতে হচ্ছে বাপেক্সকে। যে কারণে দিনে দিনে রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি।
যে কূপ ২ মাসে খনন করার কথা, সেই কূপ খনন করতে সময় লাগছে এক থেকে দেড় বছর। অনেক সময় ফিল্ডে রিগ যাওয়ার পর জনবলের অভাবে কাজ শুরু করতে পারছে না বাপেক্স। বিজয়-১০ রিগটি কৈলাশটিলায় ৭ নম্বর কূপ খনন শেষ করে কাজের অভাবে বসে আছে।
বিজয়-১২ মোবারকপুরে গেছে ২০১৪ সালের আগস্টে। পৌনে দু’বছর হতে চলছে কিন্তু রিগটি সেখানেই থেকে গেছে। আইপিএস কার্ডওয়েল সালদা নদীতে কূপ খনন করার জন্য নেওয়া হয়। সেখানে ক্যাবল ছিৎড়ে যাওয়ায় কূপে আটকা পড়েছে অনেক টাকার যন্ত্রপাতি। সেগুলো কতদিনে উদ্ধার করা সম্ভব তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।
রূপগঞ্জে কূপ খননের জন্য নেওয়া হয় আইডিকো রিগ। ড্রিলিং শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। সেখানে গ্যাসের খোজ পেতে সক্ষম হয়েছে বাপেক্স। এরপর থেকে সেখানেই পড়ে আছে আইডিকো। অন্যদিকে বিজয়-১১ রিগ তিতাস ১১ নম্বর কূপ খনন শেষ করেছে ৪ মাস আগে। সেই থেকে সেখানেই পড়ে আছে বিজয়-১১।
বাংলাদেশের রিগ যখন পড়ে আছে। ঠিক সেই সময়ে বিদেশি কোম্পানি গাজপ্রমকে ডেকে উচ্চদরে কূপ খননের কাজ দেওয়া হচ্ছে। গাজপ্রমকে যে কাজের জন্য ২শ’ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। একই কাজ বাপেক্স করতে ব্যয় হয় মাত্র ৬০ কোটি টাকা। তারপরও শুধু জনবল সংকট দেখিয়ে বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হচ্ছে।
অন্যের কাজ করার কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু বাপেক্সের নিজের ফিল্ডের কূপ খনন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় গাজপ্রমকে। অথচ বসে রয়েছে বাপেক্স।
বাপেক্সের খনন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক সাহাবুদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, জনবল সংকট শুধু খনন বিভাগে নয়, পুরো বাপেক্স সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ২ রিগের জন্য জনবল অনুমোদিত রয়েছে। সেখানে অর্ধেকের বেশি পদ শূন্য পড়ে রয়েছে।
এরপর নতুন তিনটি রিগ কেনা হলেও জনবল কাঠামো বাড়ানো হয়নি। যারা অবসরে যাচ্ছে সেই পদগুলো আর পূরণ হয় নি। যে কারণে অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে।
বাপেক্সের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে বেতন অনেক বেশি। কিন্তু বাপেক্সের বেতন কম, সে কারণে নতুন লোকজন আসতে চায় না। অন্যদিকে যারা ছিলেন তারাও ভালো সুযোগ পেয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে বলেন, বাপেক্সে জনবল সংকট অনেক পুরনো। বেতন কাঠামো কম, লোকজন থাকতে চায় না। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছে। এই কমিটি জনবল কাঠামোর খসড়া প্রণয়ন ও বেতন কাঠামো তৈরি করবে।
তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৫
এসআই