বরিশাল: বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না বরিশাল নগরবাসীর বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে নির্মিত সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল পাওনা থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে বিল পরিশোধ না হলে নতুন করে কোনো সংযোগ তো নয়ই, পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন স্থানে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে ও হবে।
অপরদিকে, সিটি করপোরেশন বলছে, বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালের আমলে যতো বিদ্যুৎ বিল এসেছে তিনি পর্যায়ক্রমে তা পরিশোধ করে আসছেন। আর এ বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ২০০৮ সালের, যা আগের মেয়রের আমলের।
![](files/June2015/June22/Barisal_Photo_ML1_704253192.jpg)
বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার পাঁচ লাখ বাসিন্দার জন্য চার কোটি ৫০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি প্রয়োজন। যার বিপরীতে সিটি করপোরেশন বর্তমানে উৎপাদন করতে পারছে দুই কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি।
ধারণক্ষমতা না থাকায় বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে এক কোটি ৫৭ লাখ লিটার পানি।
তবে এসব হিসেব নগরের বর্ধিত এলাকার বিশাল একটি অংশ বাদ দিয়ে।
বাকি পানির চাহিদা মেটাতে বরিশাল নগরের বেলতলায় ২০১২ সালে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ও নগরের রূপাতলীতে ২০১৩ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ শুরু করা হয়। এ প্লান্ট দু’টিই কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে অবস্থিত।
![](files/June2015/June22/Barisal_Photo_ML2_456253957.jpg)
প্লান্ট দু’টি চালু হলে এক কোটি ৬০ লাখ করে মোট তিন কোটি ২০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিলেট ও বরিশাল মহানগরে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ প্রকল্পের আওতায় বরিশাল নগরের বেলতলায় অবস্থিত সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটির কাজ ৯৫ ভাগ শেষ হয়ে গেছে। আর রূপাতলীতে অবস্থিত সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটির ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
বাকি রয়েছে প্লান্ট থেকে নগরের প্রায় সাতটি রিজার্ভ ট্যাংক পর্যন্ত (ট্রান্সমিশন পাইপলাইন)পাইপলাইন টানার কাজ। যা বর্তমানে শেষের পথে।
চলতি মাসে (জুন) বেলতলার সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি চালু করার চিন্তাভাবনা থাকলেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ কারণে আরো কতদিন নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানির জন্য ভোগান্তি পোহাতে হবে তা বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
![](files/June2015/June22/Barisal_Photo_ML3_984245351.jpg)
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বরিশাল আঞ্চলিক অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী লুৎফর রহমান জানান, সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দু’টির কাজ শেষের দিকে। বেলতলারটির ৯৫ ভাগ ও রূপাতলীর প্লান্টটির ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ট্রান্সমিশন পাইপলাইনের কাজও শেষ পর্যায়ে।
চলতি জুন ও আগস্ট মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে দু’টি প্লান্ট চালু করা যাবে বলে জানান তিনি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শহীদুল আলম জানান, বেলতলায় শুধু বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেই বাকি কাজ শেষ হবে। বিদ্যুতের জন্যই সেখানে শেষভাগের কাজ আগাতে পারছি না।
তিনি আরো জানান, যেহেতু ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বরিশাল সিটি করপোরেশনের আওতায়, তাই এরই মধ্যে মেয়রের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে সংযোগ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু বিদুৎ বিভাগ থেকে কোনো সারশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
![](files/June2015/June22/Barisal_Photo_ML4_545068250.jpg)
বরিশাল ওজোপাডিকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাসান আলী তালুকদার জানান, মেয়রের নামে বিদ্যুৎ কানেকশন চেয়ে একটি আবেদন পাওয়া গেছে।
তবে ১৩ কোটি টাকার বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দিতে পারছে না বরিশাল সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে নতুন করে সংযোগ দিয়ে দেনাদার বৃদ্ধি করার ইচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের নেই। তারা যদি বকেয়া বিল পরিশোধ করে, তাহলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের ঘটনাটি তার আমলে ঘটেনি। এটা ২০০৮ সালের দিকের ঘটনা।
তিনি বলেন, আমার আমলে যখন যে বিল এসেছে তা দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত প্রায় ৭৯ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালুর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৭ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৫
এসআই