ঢাকা: আগামী ডিসেম্বর নাগাদ শুরু হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। রাশিয়ার প্রযুক্তি ও অর্থায়ন এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে বহুল প্রতিক্ষীত এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চুড়ান্ত চুক্তির সময় ভ্লাদিমির পুতিন ঢাকায় আসতে পারেন বলেও জানা গেছে। ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ইতোমধ্যেই পুতিনের সফরের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অগ্রগতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করতে একটি বিশেষজ্ঞ টিম গত মঙ্গলবার (২১ জুলাই) মস্কো গেছে। সেখানে টিমটি ১৫ দিনের মতো থাকবে। এই টিমটি এর আগেও এক দফায় মস্কো ঘুরে এসেছে।
পাশাপাশি রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ টিম দুই বার ঢাকায় এসে ঘুরে গেছে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ টিমটি ঘুরে আসার পর রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ টিমের ফের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। চলতি বছর নভেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সকল প্রস্তুতি প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করা হবে। এ সময়ের মধ্যে দুই দেশের বিশেষজ্ঞ টিম এই প্রকল্পের বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের জন্য আসা যাওয়ার মধ্যে থাকবে। নভেম্বরে কাজে সব প্রক্রিয়া ও টেন্ডার চুড়ান্ত করার পর ডিসেম্বর নাগাদ বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এই বিশেষজ্ঞ টিম রাশিয়ার বিভিন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘুরে দেখছে এবং সার্বিক বিষয়ে অবগত হচ্ছে। শুধু বিশেষজ্ঞ টিমই নয়, এ ধরনের প্রকল্প সম্পর্কে জানা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট ৭টি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে রাশিয়া নিয়ে স্পট ঘুরিয়ে আনা হয়েছে। রাশিয়ায় এ ধরনের ২৪টি পারমাণবিক প্রকল্প রয়েছে। রাশিয়ার সহযোগিতায় প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ ধরনের দুইটি পারমাণবিক প্রকল্পের উৎপাদন কাজ চলছে। বাস্তবায়নের কাজ চলছে দুই প্রকল্পের। এছাড়া আরও ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে।
দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত এই বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ করতে ৫ বছর সময় লেগে যাবে। ২০২২ সালে এই প্রকল্পের উৎপাদন কাজ শুরু হবে। এ প্রকল্পে প্রথমে টানা ৬০ বছর পরবর্তীতে আরও ২০ বছর মোট ৮০ বছর উৎপাদন কাজ চলবে। এখানে ২ হাজার ৮ শ’ (২৮ শ’) মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের সর্বমোট ব্যায়ের ৯০ ভাগ অর্থ দেবে রাশিয়া। বাকী ১০ ভাগ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থ। রাশিয়ার দেয়া অর্থ পরিশোধের সময় দেয়া হবে ২৮ বছর। রাশিয়ার দেয়া এই অর্থের সুদের হার ধরা হতে পারে ১ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। নভেম্বরে মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের সব প্রক্রিয়া শেষ করে নির্মাণ চুক্তি চুড়ান্ত করা হবে। আমাদের একটি বিশেষজ্ঞ টিম দ্বিতীয় দফায় মস্কো গেছে। রাশিয়ার সহযোগিতায় এতো বিশাল একটি প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি এটা বাংলাদেশের জন্য মাইল ফলক ঘটনা। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করার সময় অর্থাৎ প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অতিথি হিসেবে থাকবেন এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
এদিকে চলতি বছরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বাংলাদেশ সফরে আসছেন বলে সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দার নিকোলায়েভ।
তিনি জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চূড়ান্ত চুক্তির সময় পুতিন ঢাকায় আসতে পারেন।
২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মস্কো সফরের সময় রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে প্রযুক্তি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ওই সময়েই রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৫
এসকে/জেডএম