ঢাকা: ‘সাশ্রয় কর জ্বালানি, বাঁচাও সম্পদ বাঁচাও ধরণী’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রোববার (৯ আগস্ট) পালিত হবে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস। জ্বালানি খাতের জন্য দিবসটিকে খুবই ঐতিহাসিক একটি দিন হিসেবে অভিহিত করা হয়।
১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বহুজাতিক কোম্পানি শেল ওয়েল’র কাছ থেকে তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর ও কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্র এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিশন কোম্পানিতে থাকা শেল অয়েলের সব শেয়ার নামমাত্র মূলে কিনে নেয় বঙ্গবন্ধু সরকার।
যার বিনিময় মূল্য ধরা হয়েছিল সাড়ে ৪ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড, যা ১৮ বছরে মোট ৩৬টি কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য হিসেবে চুক্তি সম্পাদন করা হয। অনেকে এ মূল্যকে সান্তনা মূল্য হিসেবে মনে করেন। কারণ, প্রকৃত মূল্য ছিলো অনেক অনেক গুণ বেশি।
ওই ৫টি গ্যাসক্ষেত্রে সে সময় গ্যাস মজুদ ছিল ১৩ দশমিক ৩৩৫ টিসিএফ। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ওই ক্ষেত্রগুলো থেকে ৭৫ শতাংশ গ্যাস যোগান আসতো। বর্তমানে দৈনিক ৯ কোটি ১৮ লাখ ঘনফুট গ্যাসই আসছে ওই ৫টি ক্ষেত্র থেকে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালের জুন পযর্ন্ত ৬.৫২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৭৯ হাজার কোটি টাকা।
এ কারণে ৯ আগস্টকে দেশের জ্বালানি খাতের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। ঐতিহাসিক ওই ক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০১০ সাল থেকে ৯ আগস্টকে ‘জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা ওইসব গ্যাসক্ষেত্র কিনে নেওয়াকে মাইলফলক ও পরিশোধিত মূল্যকে নামমাত্র বা সান্তনামূলক মূল্য বলে অভিহিত করে থাকেন। কারণ, সে সময়ে যে পরিমাণ প্রমাণিত মজুদ ছিল তার তুলনায় এ মূল্য অতি সামান্য। তারা মনে করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে দেশে এখনও সর্বনিম্ন দামে গ্যাস পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক(মাইনিং) মকবুল–ই-ইলাহী বাংলানিউজকে জানান, বঙ্গবন্ধু সরকারের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হলে জ্বালানি খাতে বিপযর্য় নেমে আসত না। বঙ্গবন্ধু সরকার জ্বালানি খাতের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে। শত্রু সম্পত্তি হওয়ায় সিলেট ও ছাতক গ্যাসক্ষেত্রের পরিচালনার দায়িত্ব সরকার নিজ হাতে নেয় এবং পেট্রোলিয়াম অধ্যাদেশ জারি করে।
পেট্রোলিয়াম অপারেশনের সব বিষয় পরিচালনা এবং পরিবীক্ষণের জন্য পেট্রোবাংলা গঠন করা হয়। একইভাবে কয়লাসহ কঠিন খনিজ অনুসন্ধান ও আহরণের জন্য বাংলাদেশ মিনারেল এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন গঠন করেন।
সংস্থা দু’টির চেয়ারম্যানকে সচিবের পদমর্যাদা দেওয়া হয়।
পেট্রোলিয়াম কনসেশন প্রথা বিলুপ্ত করে প্রডাকশন শেয়ারিং (উৎপাদন অংশীদারিত্ব) প্রথা চালু করেন। ৫টি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে সমুদ্র উপকূলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের চুক্তি করা হয়। বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরকে পুনর্গঠন ও গতিশীল করা হয়। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি প্রকল্পের আর্থ-কারিগরি সমীক্ষার জন্য পরামর্শক নিয়োগ এবং আলজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, সোভিয়েত রাশিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় বলে জানান মকবুল-ই ইলাহী চৌধুরী।
১৯৮৫ সালের পর থেকে দেশীয় সংস্থার (পেট্রোবাংলা/বাপেক্স) মাধ্যমে জ্বালানি অনুসন্ধান কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। এ কারণে দেশে আজ জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মকবুল-ই ইলাহী।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু যে দূরদর্শী নেতা ছিলেন এই একটি উদাহরণেই যথেষ্ট। তার সেই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের কারণে জাতি আজ অনেকখানি স্বস্তিতে রয়েছে। তখন যদি ওই গ্যাসক্ষেত্রগুলো নামমাত্র মূল্যে না কিনতেন, তাহলে গ্যাসের দাম অনেক বেড়ে যেতো।
বিগত বছরগুলোর মতো এবারও জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বেলা ১১টায় পেট্রো সেন্টারে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
সেমিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এআর খান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৫
এসআই/এএসআর