ঢাকা: নওজোপাডিকোকে (নর্থ-ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি) ঠেকাতে তৎপর হয়েছেন মাত্র হাতেগোনা কয়েকজন সিবিএ নেতা। মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের ভুল বুঝিয়ে বিক্ষুব্ধ করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জাতীয় বিদ্যুৎ সমিতি সিবিএ সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী দাবি করেছেন, তারা দেশের স্বার্থে একে প্রতিহত করতে চান। নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ভাবছেন না। তারা সবাই একজোট আছেন।
১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন এই কোম্পানির কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন রংপুর বিভাগের ৫৮ উপজেলায় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৮০ জন গ্রাহক, রাজশাহী বিভাগের ৭২ জেলায় ৬ লাখ ১৬ হাজার ১৫০ জন গ্রাহক স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন এই কোম্পানির অধীনে চলে যাবেন।
সিবিএ সভাপতি বলেন, কোম্পানি হলে কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাড়বে। কিন্তু রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে। রাষ্ট্র জিম্মি হয়ে পড়বে কোম্পানির কাছে।
কোম্পানির মালিকানাও থাকছে সরকারের হাতেই। তাহলে কেন আপত্তি এমন প্রশ্নের জবাবে সিবিএ সভাপতি বলেন, কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে মন্ত্রণালয়। আর মন্ত্রণালয় চালায় আমলারা। আমলারা যখন যে সরকার থাকে, তখন তার।
তিনি বলেন, ৩১ আগস্ট রাত ১২টা থেকে নওজোপাডিকো কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে রয়েছি। যদি সত্যি সত্যি কার্যকর করা হয়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে কর্মবিরতি পালন করা হবে।
জহিরুল ইসলাম চৌধুরী দাবি করেন, পিডিবি ভেঙে আগে যে কোম্পানিগুলো গঠন করা হয়েছে (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি) কোনোটিই ভালো নেই। এতে রাষ্ট্রের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়েছে। একদিন আসবে যখন রাষ্ট্রকে এ জন্য পস্তাতে হবে।
২০০৫ সালে বিএনপি এই কোম্পানিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়। আমরা এতদিন বাধা দিয়ে আটকে রেখেছি।
প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন জহিরুল ইসলাম চৌধুরী।
নওজোপাডিকোর একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলে প্রায় এক হাজার ৭শ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন; যাদের বেশির ভাগই কোম্পানির পক্ষে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টা করছেন।
এ প্রসঙ্গে জহিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ওই অঞ্চলের প্রতি স্টাফ কোম্পানির বিপক্ষে। এতে জাতীয় শ্রমিক লীগসহ কয়েকটি সংগঠন সমর্থন দিয়েছে।
২০০৫ সালে গঠন করা হয় রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানিটি। ‘রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস’ নিবন্ধন পায় ওই বছরের আগস্টের ৩ তারিখে। কোম্পানি গঠন করার পর অফিস নেওয়া হয়। কোম্পানির বোর্ড গঠন এবং এমডি নিয়োগ দেওয়া হয় ২০০৫ সালেই। সেই এমডি বসে বসেই অবসরে গেছেন ২০১১ সালে।
মিটিং আর দৌড়ঝাঁপের মধ্যে কেটে গেছে সাড়ে ৯ বছর। পিডিবির পক্ষ থেকে বার বার আশ্বাস দেওয়া হলেও চূড়ান্তভাবে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার জন্য চিঠি দিতে টালবাহনা করা হয়।
২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে আবার তোড়জোড় শরু হয়। এবারও থেমে যায় অদৃশ্য কারণে। ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই দিন এই কোম্পানি দ্রুত কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু তারপরও পার হয়ে গেছে পুরো দেড় বছর।
অবশেষে গত সপ্তাহে সেই কাঙ্ক্ষিত চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৩ আগস্ট বসছে যৌথসভা। ওই সভায় চুক্তি স্বাক্ষরের দিনক্ষণ নির্ধারণ হবে। এরই মধ্যে নতুন এমডি নিয়োগ দেওয়া হযেছে বলে নওজোপাডিকো সূত্র জানিয়েছে।
নতুন এই কোম্পানি গঠনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্নীতি, লুটপাটে নিমজ্জিত বিপিডিবির ক্ষেত্র কমিয়ে আনা।
নওজোপাডিকোর পরিচালক (অর্থ) মুশফিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিভাগ ৩১ আগস্ট মধ্যরাত থেকে নওজোপাডিকো কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ২৩ আগস্ট এ লক্ষে যৌথসভা ডেকেছেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিপিডিবির সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর আমাদের হয়ে যাবে। আর স্টাফ যারা আছেন, তারাও কোম্পানির অধীনে চলে আসবে। কাউকে চাকরিচ্যুত করা হবে না। যদি কোনো স্টাফ পিডিবিতে থেকে যেতে চান, সেই সুযোগও থাকছে। কাউকে জোর করে কোম্পানিতে নেওয়া হবে না।
এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, অনেকদিন টালবাহনা করলেও এবার আর কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। কারণ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি’র সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে এই কোম্পানি গঠনের কথা বলা হয়েছে। তারা এই কোম্পানি কার্যকর করার জন্য একাধিক চিঠি দিয়েছে।
এই কোম্পানি কার্যকর করতে ব্যর্থ হলে অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৫
এসআই/এবি