সিলেট: সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এলাকায় অবৈধ পন্থায় বিদ্যুৎ ব্যবহারের মহোৎসব চলছে। শীত আগমনের আগ থেকে রাতে ব্যাডমিন্টন খেলার নামে বিদ্যুতের তারে (লাইনে) আংটা লাগিয়ে দেড় শতাধিক স্থানে অবৈধভাবে এই বিদ্যুৎ ব্যবহার চলছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে অবৈধ পন্থায় এভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সরকারকে মোটা অংকের লোকসান গুণতে হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে শুরু করে সমাজের উচু পর্যায়ের ব্যক্তিরাও ‘ফাও’ বিদ্যুৎ ব্যবহারে সহযোগিতা যোগাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শীত মৌসুমের শুরু থেকে সিলেট নগরীর প্রায় দেড় শতাধিক স্থানে রাতে ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন করা হয়। অন্ধকারে আলো সরবরাহের জন্য এসব খেলার মাঠে বিদ্যুৎ লাইন থেকে মিটার ছাড়া সংযোগ নেওয়া হয়।
প্রতি খেলার মাঠে ৫০০ ওয়াট বা তারও বেশি ক্ষমতার ছয়টি কিংবা আটটি বাল্ব লাগিয়ে খেলার মাঠকে আলোকিত করা হয়।
সিলেট বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ৫০০ ওয়াটের ছয়টি বাল্ব জ্বালালে প্রতি ঘণ্টায় তিন ইউনিট করে বিদ্যুৎ ব্যয় হয়।
প্রতিটি খেলার মাঠ আলোকিত করার জন্য ৫০০ ওয়াটের ৬-৮টি বাল্ব ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে প্রতি রাতে শুধু নগরীতে ব্যাডমিন্টন খেলার নামে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৫০০ ইউনিট।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট নগরীর আম্বরখানা, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, মেজরটিলা, উপশহর, কুমারপাড়া, নাইওরপুল, বাগবাড়ি, কাজলহাওর, তেলিহাওর, ভাতালিয়া, মুন্সিপাড়া, শাহীঈদগাহ, কাজি ইলিয়াস, কলাপাড়া, কাজিরবাজার ও দক্ষিণ সুরমাসহ বিভিন্ন এলাকার পাড়ায়-পাড়ায় প্রায় ১৫২টি স্থানে রাতে ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া, নগরীর বাইরেও একইভাবে অবৈধ পন্থায় বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ফলে প্রতিরাতে কয়েক হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ উধাও হয়ে যাচ্ছে। লোকসান হচ্ছে সরকারের লাখ লাখ টাকা।
নগরীর জিন্দাবাজারের ব্যবসায়ী আমির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের দক্ষ লোক বা বিদ্যুৎ লাইনম্যান ছাড়া সংযোগ দেওয়ার সাহস কারো নেই। এ কাজে অবশ্যই বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা জড়িত। ’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মচারীকে দিয়ে ৪০০ টাকার বিনিময়ে লাইন সংযোগ করিয়েছি। অফিসের মই এনে ওই বিদ্যুৎ কর্মচারী সংযোগ দিয়েছেন। অবৈধ হলে লাইন সংযোগ দিল কেন?’
রাতে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের নামে রাজনৈতিক দলের নেতা ও সমাজপতিরা এসব খেলায় লাখ লাখ টাকার যোগান দিলেও বিদ্যুৎ বিল প্রদানে কোনো বরাদ্দ রাখা হয় না। ফলে বেসামাল অবস্থায় চলছে বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রতিযোগিতা।
নগরীর আম্বরখানার বাসিন্দা জুবের আহমদ বলেন, ‘আমাদের ভাই-ভাতিজারা খেলা করবে ঠিক। তবে তারা যদি ব্যাট-ক্রকের দাম যোগাতে পারে, তাহলে বিদ্যুৎ বিলের টাকাও যোগায় না কেন?’
শাহী ঈদগাহের বাসিন্দা আকমল হোসেন বলেন, ‘এই বিদ্যুৎ সরকারের, আর সরকার অর্থ দেশের জনগণ। খেলার নামে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা এদেশের ১৬ কোটি মানুষের সম্পদ নষ্ট করছে। ’
টিলাগড়ের বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, ‘আমার এলাকায় অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট হচ্ছে। ক্ষমতাসীন নেতারা লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে নিজের নাম প্রচারের জন্য খেলার আয়োজন করছেন। অথচ বিদ্যুৎ বিলের জন্য একটি টাকাও খরচ না করে তারা ‘ফাও’ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। এটা অন্যায়। ‘
এসব বিষয়ে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় এ নিয়ে অভিযান চালিয়েছি। কোথাও লাইন বিচ্ছিন্ন করেছি। চেষ্টা করেছি অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে তারা যেন কোনো বাসাবাড়ির মিটার থেকে সংযোগ নেয়। ‘
এভাবে ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকসান হচ্ছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ফাও বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা প্রয়োজন। ‘
বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
এনইউ/এইচএ/