ঢাকা: এপিএসসিএল’র (আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড) টেন্ডার জালিয়াতির তদন্তের অগ্রগতি শূন্যের কোঠায়। কমিটি প্রধান অবসরে যাওয়ায় থেমে গেছে তদন্ত।
আমেরিকান ব্যাংক ‘ওয়েল ফারগো’র মাধ্যমে উৎকোচ গ্রহণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি বৈঠক করেছে মাত্র দু’টি। সদস্যদের সিডিউল সংকটসহ নানা জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই বৈঠকে করতে ব্যর্থ হয়েছে কমিটি।
এদিকে, কবে নাগাদ কমিটির পরবর্তী বৈঠক হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউই। কমিটিকে সময় দেওয়া হয়েছিলো তিন মাস। কিন্তু এরইমধ্যে সাত মাস পার হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
এছাড়া পাচার হওয়া অর্থেরও কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি কমিটি।
অভিযুক্ত এপিএসসিএল’র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আলম এর ছেলের অ্যাকাউন্টে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে ‘ওয়েল ফারগো’র কাছে তথ্য চেয়েছিলো কমিটি। বাংলাদেশের চিঠির জবাবে নুরুল আলম ও তার ছেলের পাসপোর্ট নম্বর চেয়ে পাল্টা চিঠি দেয় আমেরিকা। কিন্তু নুরুল আলম পলাতক থাকায় সে তথ্যসহ কোনো তথ্যই দিতে পারছে না কমিটি। ফলে তথ্য প্রদান থেকে বিরত রয়েছে ওয়েল ফারগো।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বাংলানিউজকে জানান, নুরুল আলমের হদিস বের করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পেশাল ব্র্যাঞ্চকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এখন (৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, তদন্ত কার্যক্রম যেমন নেই। তেমনি তদন্ত কমিটিও সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কমিটির প্রধান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরস্তু খান গেছেন অবসরে। কমিটির অন্যতম সদস্য ড. কায়কাউস সম্প্রতি এপিএসসিএল’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন।
সে কারণে তার কোম্পানির একটি দুর্নীতির তদন্ত কমিটিতে থাকতে আগ্রহী নন ড. কায়কাউস। বিষয়টি তিনি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কিন্তু এরপরও সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে গা করছে না। সব মিলিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পুরোপুরি থমকে গেছে বলে জানা গেছে। কবে নাগাদ তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন হবে, আদৌ তদন্ত হবে কি-না-সে বিষয়ে কেউই মুখ খুলতে রাজি নয়।
অভিযুক্ত এপিএসসিএল’র সাবেক এমডি নুরুল আলমের বাসার ঠিকানায় চিঠি দিলেও সব চিঠিই ফেরৎ এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য। ধারণা করা হচ্ছে, গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন তিনি।
তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, তদন্তকাজে নুরুল আলম কোনো রকম সহায়তা করছেন না। আর তার রহস্যময় আত্মগোপনের কারণে থমকে আছে তদন্ত কাজ।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের পিপিআর অনুযায়ী চূড়ান্ত দর অনুমোদনের পর আপোস-রফার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আশুগঞ্জে ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২২’শ ২৬ কোটি টাকার দর পরিবর্তন করে ৩২শ’ কোটি টাকা করা হয়েছে। এ কারণে বাড়তি ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।
অভিযোগ উঠেছে, এই অনিয়মের কারণে রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা লোকসান হলেও কোম্পানিটির তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন এবং সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আলম ৪৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের দুই মিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানফ্রান্সিসকো শহরে অবস্থিত ওয়েল ফারগো ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে রয়েছে এপিএসসিএলের সাবেক এমডি প্রকৌশলী নুরুল আলমের ছেলে মাহফুজ আলমের অ্যাকাউন্ট। ওই অ্যাকাউন্টেই দুই মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ থেকে।
ওই দুর্নীতির নিয়ে বাংলানিউজ রিপোর্ট প্রকাশ করা ২৫ মে। ওই দিন বিকেলে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
এসআই/এসআর/জেডএম