ঢাকা: বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও গ্যাসবিহীন এলাকায় রান্নার কাজে সাধারণ বা সনাতনী চুলাই ভরসা। এ চুলায় ব্যবহার করা হয় সলিড জ্বালানি (গোবর, কৃষি উচ্ছিষ্ঠ, কাঠ, গাছ)।
সনাতনী এসব চুলার ধোঁয়ায় মা ও শিশুর জটিল রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। ইউএসএআইডির অর্থায়নে ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্চ সেন্টারের (ভার্ক) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইউএসএআইডি’র ক্যাটালাইজিং ক্লিন এনার্জি ইন বাংলাদেশ’র (সিসিইবি) ডেপুটি ট্রান্সলিড একেএম আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতি ১০ জনে ৯ জন সনাতনী চুলায় রান্না করেন। এতে ব্যবহার করা হয় সলিড জ্বালানি। সলিড জ্বালানির ফলে প্রতি ঘণ্টায় ৪শ’ সিগারেটের সমান ধোঁয়া উৎপন্ন করে। এ ধোঁয়া নারী ও শিশুদের পাশাপাশি বনজ সম্পদের ওপর সরাসরি আঘাত করে।
দেশে ধোঁয়াজনিত রোগে প্রতিবছর ৩৯-৪৫ হাজার নারী ও শিশু মারা যায়। আক্রান্ত হয় আরো ৫ লাখ। পরোক্ষ ক্ষতির শিকার হচ্ছেন আরো ৩ কোটি। হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, কাশি, চুলকানি, ফুসফুস ক্যান্সার, চোখের রোগ ও কোমর ব্যথা হয়। উজাড় হয় ঘরের আশপাশের বন, গাছপালা। কার্বনের কারণে বায়ুমণ্ডলের বাতাস ভারী হয়।
গবেষণা আরো দেখা গেছে, উন্নত চুলা ব্যবহার করে বছরে ৭০ ঘণ্টা সময় সাশ্রয় সম্ভব। যেখানে সনাতনী চুলায় প্রতিদিন গড়ে ৪ ঘণ্টা ব্যয় হয়।
তবে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরেই ধোঁয়াবিহীন চুলা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সংস্থাটি বলছে, উন্নত চুলা ব্যবহার করলে এ কার্বন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা ও রোগ প্রতিরোধ সম্ভব হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর মতো কার্বনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
স্বল্প মূল্যে পাওয়া গেলেও ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারি সহায়তায় সব ঘরে উন্নত চুলা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক গবেষণায় দেখায়, বাংলাদেশে ২০২০ সালের মধ্যে ২২ শতাংশ গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ সম্ভব। এতে প্রতি টন কার্বন-ডাই অক্সাইড কমাতে ১০ ডলারে চেয়ে কম ব্যয় করতে হবে।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিআইসি) ‘বন্ধু চুলা’ নামে জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নত চুলা উদ্ভাবন করে। পরবর্তীতে সরকার প্রতি চুলায় ২৫০ টাকা ভতুর্কি দিয়ে বাজারজাত করলেও প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পর তা থেমে যায়। কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি এগিয়ে আসলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
সূত্র জানায়, ইউনাইটেড ন্যাশনালস ফাউন্ডেশনের ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ক্লিন কুকস্টোভ (জিএসিসি)’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০১০ সাল থেকে উন্নত চুলা প্রদানে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে।
এছাড়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) মাধ্যমে সরকার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নত চুলা পৌঁছে দিতে কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ১২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উন্নত চুলা পৌঁছে দিতে চুক্তি করেছে ইডকল।
জিএসিসি’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি আসনা তৌফিক বাংলানিউজকে বলেন, চুলার পরিবর্তন না হলে ক্ষতিরোধ সম্ভব নয়। কার্বন নিঃসরণ এমন পর্যায়ে ঠেকবে যেখানে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর সমান ক্ষতিতে পড়বে। এক্ষেত্রে আমরা সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি।
সম্প্রতি ফিলামেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান দেশের বাজারে ‘মুসপানা’ নামে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও স্বাস্থ্য ক্ষতিরোধক একটি উন্নত চুলা নিয়ে এসেছে।
কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রকৌশলী মো. আতাউর রহমান সরকার বাংলানিউজকে বলেন, এ চুলা ৫১ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ী। কয়েক বছরের মধ্যে সারাদেশে এ চুলা ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, সরকার ইডকলের মাধ্যমে বর্তমানে প্রতি গ্রাহককে ৫০৫ টাকা প্রণোদনা দিয়ে ‘বন্ধু চুলা’ দিচ্ছে। যে হারে চুলা দেওয়া হচ্ছে তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে সব ঘরে চুলা পৌঁছবে না। এক্ষেত্রে দেশীয় কোম্পানিকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
আরইউ/জেডএস