ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

কার্যক্রম নেই পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির

শিল্পে বন্ধ ২১ মাস, আবাসিকে বছর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৬
শিল্পে বন্ধ ২১ মাস, আবাসিকে বছর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: রাজশাহীর বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় গড়ে উঠেছে এমএইচ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড। মিনারেল ওয়াটার, বিস্কুট, জুস, লজেন্স উৎপাদনের জন্যই করা হয়েছিল কারখানাটি।



কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাফিজ উদ্দিন জানালেন, পণ্য উৎপাদনের জন্য গ্যাস সংযোগ না পেয়ে ডিজেল দিয়ে কারখানাটি কোনোরকম চালু রাখা হয়েছে। আর তা করতে গিয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে পণ্য উৎপাদনের গতি। বেড়েছে ব্যয়, অনিয়মিত হয়ে গেছে শ্রমিকের বেতন।

গ্যাস সরবরাহ করা হবে মর্মে তাকে সম্মতিপত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ‘শিল্পে গ্যাস নয়’ সিদ্ধান্তে এখনও গ্যাস-সংযোগ পাননি। ফলে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানা করে বেকায়দায় পড়েছেন তিনি।

এর কারণ হচ্ছে, কোনো নোটিশ ছাড়াই ২১ মাস ধরে রাজশাহীর শিল্পকারখানায় গ্যাস-সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। আর এক বছরের বেশি সময় ধরে নতুন সংযোগ বন্ধ রয়েছে আবাসিকেও। তাই প্রায় দেড় হাজার আবাসিক গ্রাহক ডিমান্ডনোট ইস্যুর পর টাকা জমা দিয়েও গ্যাসের দেখা পাননি।   

আরও ১২ হাজার আবাসিক গ্রাহকের আবেদন পড়ে আছে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির (পিজিসিএল) কার্যালয়ে। এছাড়া উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে সাতটি কারখানা পড়েছে সংকটে। তাই দাফতরিক কর্মেই আটকে আছে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি। দৃশ্যত তাদের কোনো কার্যক্রম নেই এখানে।

এদিকে, রাজশাহীর উপকণ্ঠ পাবা উপজেলার ধুতরাবনে ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মাছের ভাসমান খাবার তৈরির জন্য শিল্পকারখানা তৈরি করেছে এসিআই গোদরেজ কোম্পানি। শহর থেকে গ্যাস সংযোগ নিতে তাই নিজ উদ্যোগে চার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন টানতে হয়েছে তাদের।

গ্যাস-সংযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই পিছিয়ে থাকা উত্তরের বিভাগীয় এই শহরে বিনিয়োগ করেছিল কোম্পানিটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত গ্যাস-সংযোগ না পেয়ে উৎপাদনে যেতে পারেনি। তবে গ্যাস সংযোগ পেলে যেকোনো সময় কারখানা চালু করতে পারবে তারা।

এদিকে, একই উপজেলায় গড়ে ওঠা রহমান জুট স্পিনার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুর রহমান জানান, পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে কারখানায় বিনিয়োগ করা হয়। এখানকার অর্থকরী ফসল পাটকে কাজে লাগানোই ছিল মূল লক্ষ্য। পাট থেকে রফতানিযোগ্য সুতা উৎপাদন করার জন্য বিভিন্ন মেশিনারিজ স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু গ্যাস না পাওয়ায় তা শুরু করা যায়নি।   

অপরদিকে মহানগরীর সিরোইল নিউ কলোনি এলাকার অধিবাসী আকবর আলী জানান, ডিমান্ডনোট ইস্যুর পর টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। বাড়ির ওয়্যারিংও করা হয়েছে। কিন্তু আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় বাড়িতে গ্যাসের চুলা জ্বলেনি আজও। এজন্য ক্ষোভ জানান তিনি।  

এছাড়া শিল্প ও আবাসিকে গ্যাস-সংযোগ বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান। বিষয়টি দ্রুত বিবেচনার দাবিও জানান তিনি।
 
মো. মনিরুজ্জামান বলেন, গ্যাস সংযোগ পাওয়ার আশায় অর্থনৈতিক দিক থেকে অনগ্রসর রাজশাহীতে এসে শিল্পমালিকরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এগুলো চালু হলে স্থানীয়ভাবেই বিপুল সংখ্যক বেকার জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। ধীরে ধীরে রাজধানী ঢাকার ওপর থেকে চাপ কমতে থাকবে। কিন্তু গ্যাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে শিল্প স্থাপন হলেও ব্যবসায়ীরা শিল্পপণ্য উৎপাদনে যাওয়ার জন্য কারখানায় গ্যাস-সংযোগ পাচ্ছেন না। এটা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

পিজিসিএল সূত্রে জানা গেছে, এরইমধ্যে রাজশাহীতে সাতটি শিল্প কল-কারখানায় গ্যাস দেওয়া হয়েছে। অন্য সাতটি কারখানাকে গ্যাস-সংযোগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন সংযোগ বন্ধ থাকায় তাদের এখনই গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এরপরও নয়টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে।

পিজিসিএলের রাজশাহী অঞ্চলিক ব্যবস্থাপক তোফায়েল আহমেদ জানান, সরকারি সিদ্ধান্তে আবাসিকে সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্পে সংযোগ বন্ধ রয়েছে ২০১৪ সালের মে মাস থেকে।

এখানে তাদের করার কিছু নেই। আর গ্রাহকদের ডিমান্ডনোটের টাকা সরকারি কোষাগারেই আছে। এরপরও কেউ টাকা ফেরত চাইলে নিয়মানুযায়ী তা ফেরত দেওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে রাইজার ক্রয়ের দরপত্রের নির্দেশনা আসবে। নির্দেশনা পেলে আহ্বান করা হবে দরপত্র, শুরু হবে নতুন সংযোগ। কিন্তু কোনো নির্দেশনা না আসায় চলতি অর্থবছরের শুরুতে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৬
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।