ঢাকা: নানা প্যাকেজের সমন্বয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প। এর মধ্যে ব্যয় বেড়েছে গবেষণা, সেবা ও নির্মাণ খাতে।
কিন্তু কাজের মাঝখানে এসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পের গবেষণা ও নির্মাণ কাজে ব্যয় বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রস্তাব করেছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে ‘নবীন’ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অল্প অভিজ্ঞতার কারণেন প্রকল্পের দলিল প্রণয়নের ক্ষেত্রে গরমিল দেখা যায়।
পরবর্তীতে রাশিয়ান ফেডারেশনের ঠিকাদারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি হয়। এর আওতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের দায়বদ্ধতা এবং কার্যাবলী নির্ধারিত হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নে এ পযর্ন্ত অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প আমাদের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা। যে কারণে কিছু খাতে ব্যয় কম বেশি হচ্ছে। চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এই কাজ করা কঠিন।
‘পরবর্তীতে এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে’ জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও পযর্ন্ত কোনো ঝামেলা ছাড়াই প্রকল্পের কাজ সুন্দর মতো এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন টার্গেট ছিল, সেভাবেই হয়েছে। নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ হচ্ছে প্রকল্প এলাকায়, যা দেখলে মনে হবে এটা কোনো বাণিজ্যিক এলাকা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এটা বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ প্রকল্পের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরও নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
গবেষণা খাতের ব্যয় বৃদ্ধি
প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং রাশিয়া সরকারের মধ্যে ৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি অনুযায়ী ১০ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রকল্পের ডিপিপি’তে গবেষণা খাতে ৫০ কোটি ডলার (৪ হাজার কোটি) এবং সরকারের ১০ শতাংশ অগ্রিম ফি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও এটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের মধ্যে ৪টি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী গবেষণা খাতে অতিরিক্ত ৪৩২ কোটি ৫১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
নির্মাণ কাজে ব্যয় বৃদ্ধি
প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য নির্মাণ কাজ বিবেচনা করে ৩১৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিলো। তবে জাতীয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আবাসন পল্লী, কন্সট্রাকশন পাওয়ারের জন্য সাবস্টেশন, টলিকমিউনিকেশন খাতে অতিরিক্ত ৮৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ছে।
সরবরাহ ও সেবা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি
এখাতের বিভিন্ন উপখাতে প্রাথমিকভাবে ১০৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিলো। আর সাইট লাইসেন্স ও নির্মাণ লাইসেন্স পাওয়ার জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাতের জন্য সামগ্রিক সরবরাহ ও সেবা খাতে মোট ২৫৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
ভ্যাটে ব্যয় বৃদ্ধি
আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পে প্রযোজ্য সব ধরনের ভ্যাট বাংলাদেশের পক্ষে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ঋণপত্রের (এলসি) কমিশন, জেটি চার্জ, ইন্সুরেন্স ও কমিশনের উপর ভ্যাট মওকুফ হবে বিবেচনায় ডিপিপি’তে ভ্যাট খাতে বরাদ্দ ছিলো মাত্র আড়াই কোটি টাকা।
কিন্তু এসব খাতে ভ্যাট দিতে হবে। তাই আরও প্রায় ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
কমেছে মেরামত ও সংরক্ষণ খাতের ব্যয়
প্রাথমিকভাবে এ খাতের যানবাহন, প্রকল্প সাইট ও সাইট অফিস, আবাসন এলাকা এবং অন্যান্য অবকাঠামো এবং সম্ভাব্য মেরামত ও সংরক্ষণ খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে। এখাতে মোট বরাদ্দ ছিল ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকায়।
কমেছে সম্পদ সংগ্রহ খাতের ব্যয়
যানবাহন, অফিস সামগ্রী, আসবাবপত্র, কম্পিউটার সামগ্রী, স্থানীয় ও বৈদেশিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সংগ্রহ খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে। এ খাতে ১৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিলো, যা কমে হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা।
কমেছে জনবল ব্যয়
প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিয়োজিত জনবলের বেতন খাতেও বরাদ্দ কমানো হয়েছে। অনুমোদিত ডিপিপিতে এ খাতে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিলো। যা এখন কমে হয়েছে ১৩ কোটি টাকা।
ব্যয় কমেছে প্রাইস ও ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি খাতেও
প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিবেচনায় প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে সাড়ে ৯ কোটি ও ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি খাতে সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা ব্যয় কমানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২ ২৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৬
এমআইএস/এমএ