বরিশাল: ঠিকাদারের কাছ থেকে আরো দুই মাসে আগেই প্রকল্পের কাজ বুঝে নিয়েছে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কিন্তু প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় চালু করা যাচ্ছে না বরিশালের দুইটি সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট।
এতে করে সব আয়োজন সম্পন্ন থাকা সত্ত্বেও বরিশাল নগরবাসীর বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করা যাচ্ছে না নবনির্মিত প্লান্ট দুটি। তবে কর্মী প্রশিক্ষণ চলছে কোনোমতে।
জেলা বিদ্যুৎ বিভাগের ভাষ্য, বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পূর্বের বিদ্যুৎ বিল পাওনা রয়েছে। ফলে এ প্লান্টে কোনোভাবেই নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে চায় না তারা।
তবে বরিশাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দাবি, মাত্র ৬ মাস এ প্রকল্পটি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ সময়ের বিদ্যুৎ বিলসহ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পরিচালনার সব খরচ তারা বহন করবে।
বিসিসি সূত্র জানায়, সিটির আওতাধীন ৫ লাখ নগরবাসীর জন্য ৪ কোটি ৫০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। বর্তমানে উৎপাদন করা হচ্ছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি। কিন্তু ধারণক্ষমতা না থাকায় নগরীর বর্ধিত এলাকার বিশাল অংশ বাদ দিয়ে বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে ১ কোটি ৫৭ লাখ লিটার পানি।
ফলে নগরবাসীর বাকি পানির চাহিদা মেটাতে কীর্তনখোলা নদী তীরে বেলতলায় ২০১২ সালে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এবং নগরীর রুপাতলীতে ২০১৩ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ শুরু হয়। ওই প্লান্ট চালুর মাধ্যমে ১ কোটি ৬০ লাখ করে ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
বরিশাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিলেট ও বরিশাল নগরীতে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ প্রকল্পের আওতায় নগরের বেলতলা ও রুপাতলীতে সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দুটির শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া প্লান্ট থেকে নগরীর ৭টির মতো রিজার্ভ ট্যাংক পর্যন্ত পাইপলাইন টানার কাজও শেষ হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে প্লান্ট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি চালু না হওয়ায় ভেতরের হাউজে জমে থাকা পানিতে শেওলা ভাসছে। বিভিন্ন প্লেটে শেওলার আস্তর পড়ে গেছে। সীমানা প্রাচীরের দেয়াল ও বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
আরো দেখা যায়, কীর্তনখোলা নদীর তীব্র ভাঙনে ট্রিটমেন্ট প্লান্টের গাইড ওয়ালের ৩০০ ফুট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনরোধে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে প্লান্টের একটি ভবন, গাইড ওয়ালের বাকি অংশ ও প্লান্টের কাজের জন্য তৈরি দুটি লেক।
এসব বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, নিয়ম অনুযায়ী কর্মী প্রশিক্ষণসহ ৬ মাস প্লান্টটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পরিচালনা করবে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগকে বিষয়টি বলা হলেও তারা ভ্রুক্ষেপ করছে না।
তিনি আরো জানান, বেলতলার প্লান্টটি কীর্তনখোলা ভাঙনের মুখে পড়ায় জিও ব্যাগ ফেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু কাজ করেছিল। তবে স্থায়ী নদী রক্ষা বাঁধের প্রয়োজন রয়েছে, না হলে প্লান্টটি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
এ বিষয়ে ওজোপাডিকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমজাদ হোসেন জানান, বিসিসির কাছে ১২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ওই টাকা পরিশোধ না করলে নতুন সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। প্রকল্পটি এখন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের থাকলেও ৬ মাস পরে সেটি সিটি করপোরেশনেরই হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিসির পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মনিরুল ইসলাম স্বপন বলেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হচ্ছে। তবে নগরবাসীর ভোগান্তির কথা চিন্তা করা উচিত বিদ্যুৎ বিভাগের।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬
এমএস/এসআর