ঢাকা: বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ছেড়েছেন অনেক আগেই। তারপরও পরিচয় গোপন করে তাকেই প্রশিক্ষণের নাম করে চীন সফরে পাঠানোর তোড়জোড় চলছে।
সরকারের জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ছয় কর্মকর্তাকে পাঁচদিনের প্রশিক্ষণের জন্য চীনে পাঠানো হচ্ছে। । ছয় কর্মকর্তার মধ্যে বেগম শায়লা ইয়াসমিন গত ২৭ নভেম্বর পদোন্নতি পেয়ে উপসচিব হয়েছেন। ওই দিনই তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে বদলি হন তিনি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে জ্বালানি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোন কাজে না লাগলেও কেন তাকেই প্রশিক্ষণে পাঠানোর তোড়জোড় সে ব্যাপারে প্রশ্ন উঠছে।
পদোন্নতি এবং নতুন কর্মস্থলে বদলির পরও ৬ ডিসেম্বর জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিভাগের জারি করা বিদেশ ভ্রমণের আদেশে শায়লা ইয়াসমিন উপ-পরিচালক (প্রশাসন) বিইআরসি, সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবেই দেখানো হয়েছে। নির্দেশক্রমে আদেশটি জারি করেছেন জ্বালানি বিভাগের উপ-সচিব শহিদুল ইসলাম। তিনি শায়লা ইয়াসমিনের পদোন্নতি এবং বদলির বিষয়টি জানতেন কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘আমরা মৌখিকভাবে বিষয়টি জানতাম। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানতাম না। আগামী ১৬ থেকে ২০ ডিসেম্বর এই ছয় কর্মকর্তার ‘এনার্জি ফ্রেমওয়ার্ক পলিসি এন্ড ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য চীনের বেইজিং এ যাওয়ার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইটেও পদোন্নতিপ্রাপ্তদের তালিকা দিয়ে থাকে। সরকারের কোন কর্মকর্তা কারো পদোন্নতির বিষয় আনুষ্ঠানিকভাবে জানেন না বিষয়টা মোটেই যৌক্তিক নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ২৭ নভেম্বর মোট চারটি পদোন্নতির আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
উপ-সচিব শহিদুল ইসলামের জারি করা আদেশের শেষভাগে অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১০টি স্থানে আদেশের কপি প্রেরণ করা হয়েছে। এখানে ৩ নম্বরে সচিব (অতিরিক্ত সচিব) বিইআরসি উল্লেখ করা হয়েছে। বিইআরসির সচিব ফয়জুর রহমানও একই দিন অর্থাৎ ২৭ নভেম্বর সরকারের যুগ্ম সচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন।
একই চিঠিতে একজনের পদোন্নতির বিষয়টি জানা থাকলেও অন্য জনেরটা থাকলো না কেন এমন প্রশ্নে শহিদুল ইসলাম বলেন,‘আমাদের ভুল হলে আমরা এটা ঠিক করে দেব। তবে তার বিদেশ ভ্রমণে আইনত কোন বাধা নেই। আর বিষয়টি বিইআরসির কাছেই জিজ্ঞেস করেন।
প্রসঙ্গত সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন নীতি না থাকায় অপ্রয়োজনীয় হলেও রাষ্ট্রীয় অর্থে কর্মকর্তারা যাচ্ছেতাই ভাবে বিদেশ ভ্রমণ করেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা দপ্তরের কাজে এই বিদেশ ভ্রমণ বা প্রশিক্ষণ কোন কাজে লাগবে কি না তাও যাচাই বাছাই করা হয় না।
বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেল আবার এই উপসচিব শহিদুল ইসলামের কথায়। তিনি বললেন, এটা কোন বিষয়টা কি কাজে লাগবে না লাগবে এটা বড় বিষয় না। কারণ আমাদের এখান থেকে অনেকে প্লানিং বা অন্য মন্ত্রণালয়ে চলে গেছেন তাদেরওতো আমরা বিদেশ ঘুরিয়ে এনেছি।
জ্বালানি বিভাগের জারি করা আদেশে বলা হচ্ছে এই প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণের যাবতীয় ব্যয়ভার এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) প্রশিক্ষণ এবং ভ্রমণ ব্যয় খাত থেকে নির্বাহ করা হবে। প্রশিক্ষণ শেষে সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
বিইআরসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, যেহেতু তিনি এখন আর বিইআরসিতে কাজ করছেন না, তাই এ ধরনের প্রশিক্ষণে তার দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে বিইআরসির কোন লাভ হবে না। তিনি যেহেতু বিইআরসিতে নেই সঙ্গত কারণে তিনি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনই বা কি দেবেন!
বিইআরসি সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী অন্যবিভাগের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনাপত্তিপত্র প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অনাপত্তি না থাকার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কমিশনের অপর একজন সদস্য এ বিষয়ে আপত্তি তুললে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, তার সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অনাপত্তি দেয়ার বিষয়ে মৌখিক কথা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
এসআই/আরআই