ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছেন রাশিয়ায়

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৭
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছেন রাশিয়ায় ন্যাশনাল রিসার্চ নিউক্লিয়ার ইউনিভার্সিটি-মেফি’তে অধ্যয়নরত তিন ছাত্র

ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য শিক্ষার্থীদের রাশিয়া পাঠিয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে। রাশিয়ার বিখ্যাত ন্যাশনাল রিসার্চ নিউক্লিয়ার ইউনিভার্সিটি-মেফি’তে বর্তমানে বাংলাদেশি ৪৩ জন শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন।

পরমাণুবিজ্ঞানে বিশেষ শিক্ষা অর্জন এবং এইখাতে মানবসম্পদ তৈরির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ-রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় এই শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়াশোনা করছেন। চুক্তি অনযায়ী রুশ সরকার প্রতিবছর বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পরমাণুবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদান করে আসছে।

 

মেফিতে অধ্যয়নরত এই শিক্ষার্থীরা বাৎসরিক গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। গত রোববার (২৭ আগস্ট) মেফির তিন ছাত্রের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। এরা হলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তানজিম রহমান, ইয়ামিন খান এবং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাজিদ আল মুকিত।  

ট্রিউনি গ্রুপের কার্যালয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ হয়। আলাপকালে তারা তাদের পড়াশোনার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তুলে ধরেন।

তারা জানান, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২টি দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা পরমাণুবিজ্ঞানে বিশেষ শিক্ষা অর্জনের জন্য পড়াশোনা করছেন। সেখানে তারা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, পরিচালনা, নিউক্লিয়ার রেডিয়াম নিরাপত্তা, থার্মো পাওয়ারসহ বিভিন্ন বিষয়ে উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বিশেষজ্ঞ হবেন। বাংলাদেশের এই শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি ফ্রি সুবিধা ছাড়াও প্রতি মাসে ভাতা দেওয়া হয়। এছাড়া এই শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারও আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে।
 
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সাড়ে ৬ বছর পড়াশোনা করতে হবে। প্রথমে এক বছর রুশ ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশ ভাষায় লেখা বই পড়ানো হয় এবং শিক্ষকরাও রুশ ভাষাতেই ক্লাস নেন। ভাষা শিক্ষার পর তিন বছর অনার্স এবং ২ বছর মাস্টার্স কোর্স করানো হয়। কোর্স শেষে এই শিক্ষার্থীদের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে (নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে) ব্যবহারিক শিক্ষা অর্থাৎ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত করা হবে। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে কিভাবে পরিচালনা করতে হবে সে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাদেরকে। তিন বছর পড়াশোনার পর কে কোনটার উপর বিশেষজ্ঞ হবেন সেটা ভাগ করে দেওয়া হয় বলেও এই শিক্ষার্থীরা জানান।  

মেফিতে তাদের যেসব বই পড়ানো হয় তার সবই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লেখা। লাইব্রেরি থেকে বিনামূল্যে বই দেওয়া হয়। তাদের কোনো বই কিনতে হয় না। এখানকার শিক্ষকদের অনেকেই রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্পর্কে এই শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্লাসের বাইরেও শিক্ষকরা বিভিন্ন সহযোগিতা করে থাকেন। কেউ কোনো বিষয়ে বুঝতে না পারলে শিক্ষকরা নিজেরাই বোঝার চেষ্টা করেন ওই শিক্ষার্থীর সমস্যা আসলে কোথায়। সমস্যা থাকলে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের কাছে যেতে বলেন। কোনো সমস্যা নিয়ে শিক্ষকদের কাছে গেলে বসিয়ে তার পর গুরুত্ব দিয়ে কথা শোনেন। শিক্ষকরা সব সময়ই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের ক্ষেত্রে সর্তকতা ও নিরাপত্তার উপর বেশি গুরুত্ব দেন।  

তাদের মতে, সতর্কতার মাধ্যমেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। শিক্ষকরা সব সময় বলেন, তোমরা যোগ্য হয়ে ওঠো। আমাদের কাছ থেকে যত বেশি সহযোগিতা দরকার নাও।  

সম্প্রতি এই শিক্ষার্থীদের রাশিয়ার রোস্তভ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে(এটি ভোল্গোদোনস্কি পাওয়ার প্লান্ট নামেও পরিচিত) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদেরকে ১৫ দিন রেখে পাওয়ার প্লান্ট পরিচালনার প্রক্রিয়া, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পাওয়ার প্লান্টের যন্ত্রাংশ তৈরিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম দেখানো হয়েছে।  

ওই পাওয়ার প্লান্টের অবস্থানের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এই তিন ছাত্র জানান, কিভাবে পাওয়ার প্লান্ট চালানো হয় আমাদের সে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এখন আমাদের এই প্রক্রিয়াগুলো দেখানো হয়েছে। সেখানে রিঅ্যাক্টর, কোরভ্যাসেল, স্টিম জেনারেটর, কোরক্যাচার, প্রেসরাইজার, ফ্রিডওয়াটার পাম্প, পাইপ তৈরি হচ্ছে। এগুলো ভারতের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের জন্য পাঠানো হবে।  

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এএসই গ্রুপ অব কোম্পানিজ বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে সর্বাধুনিক ৩+ প্রজন্মের দুটি বিদ্যুৎ ইউনিট থাকবে, যার প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১২,০০ মেগাওয়াট। মেফিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বিশেষজ্ঞ হয়ে দেশে ফিরে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করবেন। তাদেরকে অবশ্যই রূপপুর প্রকল্পে যোগ দিতে হবে এবং সর্বনিম্ন ৬ বছর এখানে চাকরি করতে হবে এই শর্তে উচ্চতর শিক্ষার জন্য রাশিয়া পাঠানো হয়েছে। এদের প্রথম ব্যাচ ২০২০ সালে দেশে ফিরবে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনার্স করার পর তানজিম রহমান বৃত্তি নিয়ে মেফিতে পড়াশোনা করছেন। তিনি বলেন, আমাদের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হবে। আমি অবশ্যই এখানে কাজ করতে চাই।

ইয়ামিন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স এবং নিউক্লিয়ার এনার্জিতে মাস্টার্স করে মেফিতে যান।  
তিনি বলেন, আমার ইচ্ছাই দেশের জন্য কাজ করা। আমাদের দেশে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট হচ্ছে এটা অনেক বড় বিষয়। এখানে সফলতার সঙ্গে কাজ করার জন্য নিজেকে সেভাবেই তৈরি করছি।  

বুয়েট থেকে ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করার পর মেফিতে অধ্যয়নরত সাজিদ আল মুকিত বলেন, পরমাণুবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা ভাল লাগে এই জন্যই এই বিষয়ের উপর পড়াশোনা করতে গিয়েছি। দেশে ফিরে রূপপুর প্রকল্পে কাজ করতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, আগস্ট, ৩০, ২০১৭ 
এসকে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।