ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

রামপালকে হটিয়ে উৎপাদনে যাচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
রামপালকে হটিয়ে উৎপাদনে যাচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র/ছবি: বাংলানিউজ

পায়রায় (পটুয়াখালী) নির্মাণাধীন কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘুরে: রামপালের আগেই উৎপাদনে আসছে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আর এটাই হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম বৃহৎ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। প্রথম ইউনিট ২০১৯ সালের এপ্রিলে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে।

বিদ্যুৎ  জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কথাতেই এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) পায়রা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।


 
এমনটি হলে ঢাকঢোল পিটিয়ে আসা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরাজিত হচ্ছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে! ২০১০ সালে পরিকল্পনা নেওয়া হয় রামপাল কয়লা ভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টের। অন্যদিকে একই ক্ষমতা সম্পন্ন পায়রা পাওয়ার প্লান্টের আলোচনাই শুরু হয় ২০১৩ সালে। অর্থাৎ তিন বছর পরে আলোচনা শুরু করলেও প্রায় ৮ মাস আগেই উৎপাদনে যাচ্ছে এ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।
 
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র/ছবি: বাংলানিউজঅন্যদিকে ২০১০ সালে পরিকল্পিত আলোচিত-সমালোচিত রামপাল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসতে পারে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জনসংযোগ অধিদপ্তরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী।
 
সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী সাশ্রয়ী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এরমধ্যে কয়লা ভিত্তিক ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র বড়পুকুরিয়ায় ২৫০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।
 
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারি-বেসরকারি খাতে বেশ কিছু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ছিলো রামপাল। কিন্তু পরে আলোচনা শুরু হলেও আগেই উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়ে অন্যদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে সরকারি মালিকানাধীন নর্থ-ওয়েষ্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি।
 
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার পটুয়াখালীর পায়রা এলাকায় বিদ্যুৎ হাব স্থাপন করবে। এখানে মোট ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। সব মিলিয়ে ১২ বিলিয়ন ডলার বা  ৯৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র/ছবি: বাংলানিউজ 
পায়রা পাওয়ার প্লান্টে বাংলাদেশ এবং চীনের সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে। দেশীয় নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) গঠিত বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসিএল) কেন্দ্রটির মালিক। এতে চীনের এক্সিম ব্যাংক বিনিয়োগ করছে।
 
পায়রা বিদ্যুৎ হাবে এনডব্লিউপিজিসিএল ৬ হাজার ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে। এরমধ্যে সিএমসির সঙ্গে সমান অংশীদারিত্বে আরো একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এবং জার্মানির সিমেন্স এজির সঙ্গে তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে। এছাড়াও রুরাল পাওয়ার কোম্পানি আরপিসিএল একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন লিমিটেড আরো একটি সমান ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে।
 
শুক্রবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ঘুরে দেখা গেছে, এর প্রথম ইউনিটের কাঠামো নির্মাণ প্রায় শেষ। এছাড়াও দ্বিতীয় ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া কয়লা পরিবহনের জন্য স্থায়ী জেটি নির্মাণের কাজ চলছে।
 
পদ্মাসেতু নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। এতে এই এলাকায় অন্তত ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হবে। পায়রা থেকেই নয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
 
অষ্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা সংগ্রহের লক্ষ্যে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। তারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে কয়লা সরবরাহ করতে আগ্রহী।
 
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হবে সর্বাধুনিক অল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যান প্রযুক্তির। সর্বাধুনিক এ প্রযুক্তিতে পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রিত মাত্রার মধ্যে থাকবে বলে জানান।
 
২০১৪ সালের অক্টোবরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিসিপিসিএল গঠন করা হয়। এখানে আরো ১০০ মেগাওয়াট সৌর এবং ৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ নির্মাণ করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
এসআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।