ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুতের দাম না কমালে আইনগত ব্যবস্থা নেবে ক্যাব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৮
বিদ্যুতের দাম না কমালে আইনগত ব্যবস্থা নেবে ক্যাব সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের দাম নিয়ে কথা বলে ক্যাব

ঢাকা: বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি অন্যায্য ও অযৌক্তিক। গণশুনানিতে বিদ্যুতের মূল্য কমানোর প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছে। ফলে গণশুনানি অকার্যকর ও প্রহসনে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ক্যাব)।

রোববার (০৭ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি বাতিল ও মূল্য কমানোর দাবি জানিয়ে বলেন, আগামী দশ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে ক্যাব।

তিনি বলেন, আমরা গণশুনানিতে প্রমাণ করে দিয়েছি, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নয়, কমানো সম্ভব। দাম বাড়ানোর কারণে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নিরপেক্ষ নয়। তারা অনেক ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে। এমনকি কমিশনের কারিগরি কমিটির সুপারিশও তারা আমলে নিচ্ছে না।

ভুলনীতি ও দুর্নীতির কারণে এ অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধির পুরোটাই বহন করেন ভোক্তারা। উৎপাদন ও বিতরণে কৃত্রিম ঘাটতি দেখিয়ে বিদ্যুতের এ মূল্যবৃদ্ধিতে সর্বস্তরের জনগণের আপত্তি রয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

আগামী মার্চের পূর্বেই জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি জানিয়ে ক্যাব সভাপতি বলেন, এক সময় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ছিলো আকাশচুম্বি। সেই অজুহাত দেখিয়ে তেলের দাম বাড়ানো হয়। এখন দাম কমলেও মুনাফার পাহাড় গড়ছে বিপিসি। কিন্তু দাম কমানোর বিষয়ে আগ্রহ নেই। ক্ষেত্র বিশেষে শুধু ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে তাদের ততটা আগ্রহ নেই।

ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সরকার যদি সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদনে প্রাধান্য দিতো তাহলে ৭ হাজার ৮শ’ ৪৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। তাহলে আজকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। বরং ইউনিট প্রতি দাম ১.৫৬ টাকা কমানো যেতো। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিট প্রতি জ্বালানির খরচ (গ্যাস) ৮৪ পয়সা। আর রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি খরচ হচ্ছে ৯২ পয়সা।

স্বাভাবিকভাবেই সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম কম পড়ে। কিন্তু সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ৪৩ শতাংশ হারে আর বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৭০ শতাংশ হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে করে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারি ৪,৩৯৮ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ৪৩.০৮ প্লান্ট ফ্যাক্টরে উৎপাদন হয় ১,৬৫৯ কোটি ইউনিট। ৭০ শতাংশ হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে ২,৬৯৬ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারলেও পিডিবি তা করছে না। এতে করে এক বছরে ৭৮০ কোটি ১৪ লাখ টাকা বেশি গুণতে হয়েছে (২০১৬-১৭ অর্থবছরে)।

তিনি বলেন, বিইআরসির স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, কমদামে উৎপাদনক্ষম বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আগে চালাতে হবে। তারপর ঘাটতি থাকলে ব্যয়বহুলগুলো চালাতে হবে। কিন্তু ৪ টাকায় যে কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ৩০টাকা ইউনিট খরচ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।

ড. শামসুল আলম দাম কমানোর জন্য পনের দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এতে ভোক্তা প্রতিনিধি নিয়ে একটি স্বার্থ-সংঘাতমুক্ত টাস্কফোর্স গঠন প্রতিবেদন তৈরি করা তার ভিত্তিতে ব্যবস্থাগ্রহণ, বিতরণ কোম্পানিসমুহের বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের অবমুক্ত করার দাবি জানান।

অনেক দিন ধরেই ক্যাব বলে আসছে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে কমানো সম্ভব। আর বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন তাদের সেই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করে আসছে। ক্যাবের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর প্রথমবারের মতো দাম কমানোর ওপর গণশুনানি নেওয়া হয়। সেখানে যুক্তিতর্কের এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও ক্যাবের যুক্তি অনেকাংশে মেনে নিতে বাধ্য হন। কিন্তু তারপরও ২৩ নভেম্বর বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৩৫ পয়সা হারে বাড়ানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ক্যাবের মহাসচিব হুমায়ুন কবীর, ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৮/আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা
এসআই/জেডএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।