সম্প্রতি বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট শামীম খান রাশিয়া ভ্রমণে যান। ভ্রমণকালে তিনি নবভরোনেস পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প ও তা কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শহর ঘুরে আসেন।
১৯৫৭ সালে নবভরোনেস পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের পর থেকেই এখানে শহরের গোড়াপত্তন হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন- রোসাটম ও দেশটির সরকার যৌথভাবে বিভিন্ন অবকাঠোমো নির্মাণের মধ্য দিয়ে এ শহর গড়ে তোলে। স্কুল, কলেজ, স্টেডিয়াম, সুইমিংপোল, মার্কেট, বড় বড় শপিংমল দিয়ে সাজানো হয় শহর। এখানে আছে দক্ষ মিউনিসিপ্যাল (পৌর) করপোরেশেন। বর্তমানে এ পৌর করপোরেশন এলাকায় প্রায় ৩২ হাজার পরিবার বাস করে। সোভিয়েত (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) আমলে এখানকার জনসংখ্যা আরও বেশি ছিল। কিন্তু নানা কারণে ধীরে ধীরে কমে আসে জনসংখ্যা। ১৯৫৭ সালে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের সময় এখানে বসবাস করতো মাত্র ১৫০টি পরিবার। এরপর আবারও নবভরোনেস পাওয়ার প্ল্যান্ট ঘিরে গড়ে ওঠা শহরে আবাস গড়তে শুরু করে মানুষ।
বর্তমানে এ শহরে মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে ৫টি। প্রতিটি স্কুলে আছে একটি করে স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণ করেছে রোসাটম। এসব স্টেডিয়ামে ফুটবল, হকি, ভলিবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলার ব্যবস্থা আছে।
পাওয়ার প্লান্ট কেন্দ্র করেই এখানকার অধিকাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা পরিচালিত হয়। কর্তৃপক্ষ বর্তমানে শহরের আরও আধুনিকায়ন ও ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিশেষ করে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে মেটাল ব্যবসার দিকে। এছাড়া এ শহরে খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এখানে আছে মাংসসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। বাণিজ্যিক বিয়ার উৎপাদনেও তৎপর এ শহর৷ সম্প্রতি কোমল পানীয় উৎপাদনের একটি বড় প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। এ বাবদ বিনিয়োগ করা হয়েছে ৬০০ মিলিয়ন রুবল। এ বছর এ খাতে আরও ১ বিলিয়ন রুবল বিনিয়োগ করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কর্মসংস্থান হবে আরও ১ হাজার মানুষের।
পৌর করপোরেশনের আয়ের চার ভাগের ১ ভাগ আসে রোসাটমের ট্যাক্স থেকে। পানি, বিদ্যুৎ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রোসাটম এ ট্যাক্স দেয়। এছাড়া নিউক্লিয়ার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে অাসে আরও অর্থ। সব মিলিয়ে মোট আয়ের ৫০ ভাগই আসে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টকে কেন্দ্র করে।
নবভরোনেস মিউনিসিপ্যাল করপোরেশেনের মেয়র নিকলাই নিচাগা জানান, এখানে এই আধুনিক শহর গড়ে উঠতে সময় লাগে মাত্র ১০ বছর। আরও আধুনিকায়ন করা হবে এ শহরের। এখানকার মানুষের পেশা, জীবনজীবীকার মূল ভিত্তি এখন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা। এছাড়া এখানে কৃষিকাজও হয়। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরিই মানুষের প্রধান পেশা। শিক্ষা, ক্রীড়া, শিল্প-সংস্কৃতিসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধাই রয়েছে এখানে। এ সবের পেছনে রোসাটম সহযোগিতা দিয়ে থাকে। সরকার থেকেও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নভভরোনেসের মতোই রূপপুপর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে আধুনিক শহর গড়তে চায় বাংলাদেশ সরকার। এ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, রাশিয়ার শুধু নবভরোনেসে নয় অন্যান্য পাওয়ার প্লান্ট কেন্দ্র করেও আধুনিক শহর গড়ে উঠেছে। রূপপুরের ব্যাপারেও আমাদের তেমন পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে স্কুল-কলেজ, হাসপতাল গড়ে তোলা হবে। রূপপপুরকে কেন্দ্র কের পুরো ঈশ্বরদীই বদলে যাবে। এখানে একটি মিনি ক্যান্টনমেন্ট হবে, ঈশ্বরদী বিমান বন্দরকে আধুনিকায়ন করা হবে, নদীবন্দর হবে। এছাড়া করা হবে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে ঘোষণা হয়েছে। আধুনিক শহরের জন্য যা যা দরকার সব করা হবে এখানে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২০
এসকে/এইচজে