ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

আনোয়ারায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের নির্দেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১২
আনোয়ারায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের নির্দেশ

ঢাকা: চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে কোনও ধরনের কার্যক্রম না চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে একটি মানবাধিকার সংগঠনের দায়ের করা রিটের পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছেন আদালত।



একই সঙ্গে ওই রিট মামলার শুনানি দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন।

সোমবার বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এ রুল নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা শুনানি হয়। ওইদিন শুনানি করেন রিট আবেদনকারীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান।

এ মামলায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য থাকলেও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের পক্ষ থেকে সময় নেয় রাষ্ট্রপক্ষ।

আদালত সোমবার বেলা দু’টায় শুনানির দিন ধার্য করেন। কিন্তু সোমবার সকালে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নুসরাত জাহান আদালতে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল অসুস্থ। তিনি হাসপাতালে ভর্তি। এ কারণে এক সপ্তাহ শুনানি মুলতবি করা হোক।  

জবাবে আদালত বলেন, এক সপ্তাহ নয়, দুই সপ্তাহ দিচ্ছি। তবে এ সময় পর্যন্ত কোনও ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন না। এরপর আদালত আদেশ দেন। আদালত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশও দেন।

আদেশের পর রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নুসরাত জাহান পৃথকভাবে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল অসুস্থ থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির জন্য এক সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করেন। আদালত দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে বলেছেন, পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোনও কার্যক্রম চালানো যাবে না।

পরিবেশ, বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত পারকি বিচ, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ বেইস এবং চট্টগ্রাম শহরের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য আনোয়ারা থানার রাঙ্গাদিয়া মাঝেরচর মৌজায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন না করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং এক লাখ ঝাউ গাছ না কাটার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তার কারণ জানতে চেয়ে ওই রুল জারি করা হয়।

বিদ্যুৎ সচিব, পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে এ রিট আবেদনে বিবাদী করা হয়।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এলাকায় কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে ২০১০ সালের ২ সেপ্টেম্বর দৈনিক কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীতে এটিএন নিউজ-এ প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এরপর এইচআরপিবি রিট আবেদন করে। আদালত রুল জারি করেন।

২০ ফেব্রুয়ারির শুনানিতে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেছিলেন, ভারত থেকে কয়লা এনে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানায় ৬৪৫ একর জমির ওপর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কোনও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। এমনকি সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় এ প্রকল্পের নাম নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনও ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র না দিলে এ প্রকল্পে যে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ হবে, তা অপচয় হবে।  

তিনি বলেন, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পরিবেশ ও সমুদ্র বন্দর এবং বিমানবন্দরের সম্ভাব্য ক্ষতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হবে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যাবে। এয়ারফোর্স বেইসের কর্মকাণ্ডে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে। সেখানকার এক লাখ গাছ কেটে ফেলতে হবে। এতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। চট্টগ্রাম নগরীর মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে বছরে ৪শ’ জাহাজ নোঙ্গর করতে পারে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পর সেখানে ৮শ’র বেশি জাহাজ নোঙ্গর করবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আর এটা হলে সমুদ্র বন্দরে জাহাজ জট লেগে যাবে। ঢাকায় যেমন যানজট হয়, তেমনি জাহাজ জট হলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় ঘটবে।
 
বাংলাদেশ সময়:১৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭,২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।