লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বিভিন্নস্থানে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অভিযোগ উঠেছে। দিন-রাত মিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওই সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।
বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, গরমের সময়টাতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার মধ্যেই থাকে। এছাড়া বাতাস বা বৃষ্টি হলে দীর্ঘ সময় থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্য অতিষ্ঠ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন।
তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, পুরোনো বৈদ্যুতিক লাইন এবং ঝড়-বৃষ্টির সময় লাইনে গাছের ডাল পড়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়।
পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আবদুল্যা, সোহেল আলমসহ অনেকে জানান, বৈশাখ মাসের শুরুতে লক্ষ্মীপুরে বৃষ্টি এবং হালকা বাতাস হয়। এতে ৮-১০ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল (শুক্রবার) বিকেলে সাড়ে ৫টার দিকে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হলে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। পরে দিনগত রাত ১টার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। এছাড়া ঝড় বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত বৈদ্যুতিক লাইন মেরামতে কর্তৃপক্ষের অবহেলা থাকে। তাই দীর্ঘ সময় তাদের বিদ্যুৎ ছাড়া থাকতে হয়।
পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে দিনগত রাত পর্যন্ত আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। এতে তীব্র গরম এবং রমজান মাসে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন বলেন, সন্ধ্যা থেকে দিনগত রাত ৩টা পর্যন্ত আমাদের এলাকা অন্ধকারে ছিল। এর মধ্যে দু’বার বিদ্যুৎ এসে আবার চলে গেছে। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বাচ্চাদের নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। আবাসিক এবং বাণিজ্যিক মিলিয়ে প্রায় ৩৭ হাজার গ্রাহক রয়েছে তাদের। পৌর এলাকাকে সাতটি ফিডারে ভাগ করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে বিদ্যুতের কোনো গ্রিড না থাকায় নোয়াখালীর চৌমুহনী গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ আনতে হয়।
বিপিডিবি লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠু কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, গরমকালে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হয়। চাহিদার থেকেও বিদ্যুতের উৎপাদন বেশি হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে প্রায় সময় ক্রুটি দেখা দেয়। তাই মেরামত না করা পর্যন্ত ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। লাইনে কেন ক্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা সেটি খুঁজে বের করে মেরামত করি। অনেক সময় রাত জেগেও আমাদের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, এ সময়টাতে ঝড়-বৃষ্টি হয়। বিদ্যুৎ লাইনের আশেপাশে প্রচুর পরিমাণে গাছপালা থাকায় বাতাসে ডালপালা বৈদ্যুতিক লাইনের ওপর পড়লে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। এগুলো খুঁজে বের করতে সময় লাগে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।
মিঠু কুমার বিশ্বাস আরও বলেন, নোয়াখালীর চৌমুহনী গ্রিড থেকে বিদ্যুতের প্রধান যে লাইনটি লক্ষ্মীপুরে এসেছে, সেটির দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার। ২০ বছর আগের পুরোনো লাইনটিতে ক্রটি দেখা দেয়। ফলে মেরামত না করা পর্যন্ত পৌর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া যায় না। নতুন আরেকটি লাইন নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া লক্ষ্মীপুর শহরের পাশেই যাদৈয়া গ্রামে একটি গ্রিড বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেটি সম্পন্ন হলে হলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট কমে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২২
এসআরএস