বাগেরহাট: পেমেন্ট সার্ভার জটিলতায় বাগেরহাট শহরে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওজোপাডিকোর প্রি-পেইড মিটারে মাঝে মধ্যেই রিচার্জ করতে পারছেন না গ্রাহকরা। সময়মত রিচার্জ করতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা।
রোববার (২৪ জুলাই) সকাল থেকেও রিচার্জ বন্ধ ছিল খোদ ওজোপাডিকোর নিজস্ব বুথে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সারাদিন ওজোপাডিকোর নিজস্ব বুথ থেকেও রিচার্জ করতে পারেননি গ্রাহকরা। ওজোপাডিকো কার্যালয়ে গিয়ে রিচার্জ করতে না পারায় গ্রাহকদের বাইরের দোকান থেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে রিচার্জ করতে হচ্ছে। অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে রিচার্জ করতে না পেরে ফিরে যেতে হচ্ছে বাসায়।
এদিন দুপুরে ওজোপাডিকোর বাগেরহাট কার্যালয়ে রিচার্জ করতে আসা শহরের হাড়িখালী এলাকার শেখ লুৎফর রহমান (৫৭) বলেন, বিদ্যুতের মিটারের টাকা শেষ হওয়াতে দুই ঘণ্টা আগে রিচার্জ করতে এখানে আসি। কিন্তু তারা বলছে সার্ভারে নাকি সমস্যা। বাবা আমরা তো এতকিছু বুঝি না। রিচার্জ করতে পারছি না, বাসায় বিদ্যুৎ নেই। এখন তো বিপদে পড়েছি। দোকানে গিয়েও বিদ্যুতে রিচার্জ করা যায়। তবে এতে প্রতি বারে ১০-১৫ টাকা করে অতিরিক্ত দিতে হয়।
লুৎফর রহমান আরও বলেন, চুরি বন্ধ করতি নাকি প্রি-পেইড এই মিটার দিছে। চুরি কি বন্ধ হইছে? তারা ঠিকই অফিস ম্যানেজ করে কাজ চালাচ্ছে। কোটি কোটি টাকা বিল বকেয়া রাখছে। এই মিটার দিয়ে যত বিপদ আমাগো হইছে।
বাগেরহাট শহরের সম্মিলনী স্কুল রোড এলাকার বাসিন্দা মো. ফজলুল হক বলেন, দুই ঘণ্টায় তিনবার এলাম বিদ্যুৎ অফিসে। দুই ঘণ্টা আগে রিচার্জ করে গেছি, টাকা আসেনি মিটারে। ওদিকে বাসায় বিদ্যুৎ নেই। পরে এক দোকান থেকে অতিরিক্ত ১৫ টাকা দিয়ে আবারও রিচার্জ করলাম ১ হাজার টাকা। কিন্তু সেই টাকাও যাচ্ছে না। ওই অফিসে এসে রিচার্জ করা টাকা না ঢুকলে নাকি পরে দোকান থেকে রিচার্জ করা টাকাও ঢুকবে না। এমনিই লোডশেডিং বেড়েছে। এর সঙ্গে রিচার্জের এই দুর্ভোগে বিপদে আছি আমরা।
হাড়িখালী এলাকার নাসিমা বেগম বলেন, প্রায় ১ কিলোমিটার দূর থেকে বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে এসেছি মিটার রিচার্জ করতে। তাো বলছে, সার্ভারে সমস্যা। বিদ্যুৎও নেই, এখন রিচার্জ করব কীভাবে?
রিজার্জের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পাশাপাশি অনেকেই বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে রিচার্জ করতে না পেরে ফিরে গেছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, আগের মিটারই ভালো ছিল। এই প্রি-পেইড মিটারে একদিকে ভোগান্তি, আরেকদিকে মিটার ভাড়াসহ নানা ছুতোয় বেশি টাকা কেটে নিচ্ছে।
শহরের দশানী এলাকার ভাড়াটিয়া মোস্তাকিম বিল্লাহ রাসেল বলেন, জরুরি মুহূর্তে প্রি-পেইড মিটারে টাকা ধার নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তার জন্য একটা চার্জ দিতে হয়। এই সার্ভার সমস্যা দেখিয়ে এখন আমাকে সেই চার্জ গুণতে বাধ্য করা হচ্ছে।
ওজোপাডিকোর বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হক বলেন, মিটারে রিচার্জের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। আমরা রিচার্জ করি মূলত গ্রামীণফোনের ইন্টারনেটের মাধ্যমে। তাদের সার্ভারের সমস্যার কারণে মাঝে মাঝে এমনটা হচ্ছে। রোববার কিছু সময় রিচার্জে সমস্যা হলেও দুপুরের পর থেকে তা ঠিক হয়েছে। তবে আমাদের এখানে রিচার্জ করতে না পারলেও গ্রাহক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) থেকে রিচার্জ করতে পারছেন। আর সমস্যা সমাধানে গ্রামীণফোনের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি বিকল্প সংযোগ স্থাপনের বিষয়েও কথা হচ্ছে।
তবে সমস্যা শুধু ইন্টারনেটের, নাকি রিচার্জ সিস্টেমের এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘আইসিটি ডিভিশন জানে। আমরা এ বিষয়ে বলতে পারব না’ বলে এড়িয়ে যান এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২২
এমএমজেড