সিলেট: সিলেটে বিদ্যুৎ সংকট ক্রমশই বাড়ছে। রেশনিং পদ্ধতি শুরুর দিকে এলাকাভিত্তিক দেড় ঘণ্টা লোডশেডিং করা হতো।
সোমবার (২৫ জুলাই) লোডশেডিংয়ের নতুন সিডিউল প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সিলেট। নতুন সিডিউল অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৩ ঘণ্টা লোডশেডিং করার ছক নির্ধারণ করা হয়।
ফলে রেশনিং পদ্ধতিতে লোডশেডিংয়ের তীব্রতায় এ অঞ্চলের মানুষজন পড়েছেন বেকায়দায়। জনমনে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।
পরিস্থিতি এতই নাজুক যে, দিন দিন চাহিদার চেয়ে জাতীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সরবরাহ অর্ধেকেরও কম দেওয়া হচ্ছে সিলেট অঞ্চলে। বিভাগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন সাড়ে ৫ লাখ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে থাকা ১৯ লাখ গ্রাহক চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন।
বিভাগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত শনিবারের চেয়ে রোববার লোড বরাদ্দ আরও কম পাওয়ায় লোডশেডিং বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সোমবারে একই ভাবে চাহিদার চেয়ে অর্ধেকের কম সরবরাহ পাওয়া গেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ অর্ধেকের চেয়েও কম পাওয়ায় প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের সূচি পরিবর্তন করে বাড়াতে হচ্ছে।
সিলেট বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিম জানান, ডিভিশন-১ এর অধীনস্থ এলাকায় ২২টি ফিডারের আওতাধীন ৮৪টি এলাকায় চাহিদা ৪২ মেগাওয়াটের বিপরীতে ২০ মেগাওয়াট পাওয়া গেছে। আগের দিন রোববার ৪৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে পাওয়া গিয়েছিল ২৩ মেগাওয়াট। ফলে রেশনিং পদ্ধতিতে লোডশেডিংয়ের চাপ বাড়ছে। এ কারণে লোডশেডিংয়ের সিডিউলে পরিবর্তন আসছে।
বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সামস-ই আরেফিনের দেওয়া তথ্যমতে, ১৩টি ফিডারের আওতাধীন ৮৫ এলাকার জন্য ৩৩ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১৫ মেগাওয়াট সরবরাহ পাওয়া গেছে। রোববার ৩৭ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল ১৩ মেগাওয়াট। তাই বরাদ্দের বিপরীতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৩ ঘণ্টা সম্ভাব্য লোডশেডিংয়ে সিডিউল করা হয়। তবে বিকেলে বৃষ্টি হওয়ার কারণে লোডশেডিং কমে এসেছে। চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু চাহিদা তো সব সময় সমান থাকে না, বাড়ে আবার কমে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদের বলেন, চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ অর্ধেক পাচ্ছি, যে কারণে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বাড়ছে। সেটা হিসাব করেই সম্ভাব্য লোডশেডিং এর সূচি তৈরি করে ডিভিশনগুলো।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, বিভাগে ৪৫ লাখ ৮৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক আছেন ১৯ লাখ। গ্রাহকের বিপরীতে চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৫শ’ মেগাওয়াট। কিন্তু রেশনিং পদ্ধতিতে লোডশেডিং চলা অবস্থায় সোমবার (২৫ জুলাই) বিভাগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মিলিয়ে চাহিদার বিপরীতে লোড মিলেছে ৩১৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বিউবি’র চাহিদা ছিল ২১৫ মেগাওয়াট, মিলেছে ১১৯ মেগাওয়াট এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) ৩৩৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে ১৯৬ মেগাওয়াট লোড পাওয়া গেছে।
চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি বা লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বিউবিতে ৯৬ মেগাওয়াটা এবং পল্লী বিদ্যুতে ১৩৯ মেগাওয়াট ঘাটতি। চাহিদার বিপরীতে প্রাপ্ত লোডের শতকরা হার বিউবি এলাকায় ৫৫ দশমিক ৩৫ এবং পল্লী বিদ্যুতে ৫৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। লোডশেডিং এর হার শতকরা ৪৪ দশমিক ৬৫ এবং ৪১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
সোমবার বিভাগের মধ্যে সিলেট জেলায় ২৬৭ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে ১৫৫ মেগাওয়াট লোড পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিউবিতে প্রাপ্ত লোড ৮৬ এবং পল্লী বিদ্যুতে ৬৯ মেগাওয়াট। লোডশেডিং করতে হবে বিউবি এলাকায় ৬৪ এবং পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় ৪৮ মেগাওয়াট। জেলায় চাহিদার বিপরীতে বিউবিতে প্রাপ্ত লোডের হার ৫৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং পল্লী বিদ্যুতে ৫৮ দশমিক ৯৭ মেগাওয়াট। আর লোডশেডিং বিউবি এলাকায় ৪২ দশমিক ৬৭ এবং পল্লী বিদ্যুতে ৪১ দশমিক ০৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২২
এনইউ/এমজেএফ