ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

২০২৩ সালের শেষ দিকে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি লোডিং

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২২
২০২৩ সালের শেষ দিকে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি লোডিং

ঢাকা: আগামী বছরের অক্টোবর বা নভেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) প্রথম ইউনিটে নিউক্লিয়ার ফুয়েল (জ্বালানি) লোডিং করা হবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া সফরের সময় এ বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন।

গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি এবং পরবর্তিতে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো নেতিবাচক প্রভাব রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজে পড়েনি। শুরু থেকেই নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী এ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। কোনো কোনো অংশের কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

গত জুলাই মাসের শেষের দিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি পরমাণু বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল রাশিয়া সফর করেন। এ সময় তারা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটমের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।  

এ আলোচনায় রূপপুরের প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি, প্রথম ইউনিটের নিউক্লিয়ার ফুয়েল লোডিং, ফুয়েল বাংলাদেশে আনার পর বিমানবন্দর থেকে প্রকল্প এলাকায় স্থানান্তরের সময় নিরাপত্তার বিষয়, লোডিংয়ের সম্ভাব্য সময় এবং আনুষ্ঠানিকতাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে নির্ধারিত সময়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে বাংলাদেশ এবং আগে থেকেই বার বার এ বিষয়টি রোসাটমকে জানানো হয়েছে। রাশিয়া প্রতিনিধি দলের এ আলোচনায় রোসাটম থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে নির্ধারিত সময় ঠিক থাকবে এবং সিডিউল অনুযায়ীই কাজ এগিয়ে নিতে।  

আগামী বছরের শেষ দিকে প্রথম ইউনিটের জ্বালানি লোডিং হবে। একে বলা হয় ফ্রেস নিউক্লিয়ার ফুয়েল লোডিং। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফুয়েল লোডিং প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ ধাপ। এর মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করবে। তবে এ ফুয়েল লোডিংয়ের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশে এবং রাশিয়া উভয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সুবিধাজনক সময়ে তারিখটি নির্ধারণ করা হবে বলে সূত্রে জানা যায়।

সূত্র আরও জানায়, নিউক্লিয়ার ফুয়েল লোডিং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক অর্জন। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ীই এই কার্যক্রম শুরুর সময় আনুষ্ঠানিকতার বিষয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ফুয়েল লোডিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করবেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিনিধিসহ আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতিনিধিরাও থাকবেন। আগামী বছরের ডিসেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর আগেই রূপপুরের প্রথম ইউনিটের ফুয়েল লোডিং উদ্বোধন করা হবে। সেক্ষেত্রে অক্টোবর অথবা নভেম্বর মাসে এটি করা হতে পারে বলেও সূত্রগুলো জানায়।

রূপপুর এনপিপির জ্বালানিও আসবে রাশিয়া থেকে। এ নিয়ে রাশিয়ান নিউক্লিয়ার ফুয়েল সাপ্লাই কোম্পানি-টিভিইল এর সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে।

প্লেনে নিউক্লিয়ার ফুয়েল আসার পর সেটা বিমানবন্দর থেকে রূপপুরে প্রকল্পে নেওয়ার সময় ব্যাপক নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে।  

সূত্রে আরও জানা যায়, এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ার সঙ্গে সেনা সদস্য, পুলিশসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিভাগের সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। নিউক্লিয়ার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনে বিশেষ নিরাপত্তার কথা বলা আছে। সেই আইন অনুসরণ করেই বিশেষ ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নিউক্লিয়ার ফুয়েল রূপপুর প্রকল্পে নেওয়া হবে। এ প্রক্রিয়াটি জাতীয় নিরাপত্তা হিসেবে গুরুত্ব পাবে। এসব বিষয় নিয়েও রাশিয়াতে বাংলাদেশ ও রোসাটমের প্রতিনিধিদের সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
  
রাশিয়ার প্রযুক্তি ও আর্থিক সহযোগিতায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের এই প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ হচ্ছে। এটি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও সব চেয়ে বেশি ব্যয় বহুল প্রকল্প। এই এনপিপিতে রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তির থ্রি প্লাস প্রজম্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের রিয়্যাক্টর স্থাপন করা হবে। দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটি ইউনিটে ১২০০ করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এই প্রকল্পের মেয়াদকাল ৬০ বছর ধরা হবে, তবে পরবর্তীতে আর ২০ বছর অর্থাৎ মোট ৮০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এর প্রথম ইউনিট ২০২৩ ও দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ সালে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার চুক্তি রয়েছে রোসাটমের সঙ্গে। রোসাটমের প্রকৌশল বিভাগ এটমস্ত্রয়এক্সপোর্ট জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাকটার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

রূপপুর এনপিপির ফুয়েল লোডিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, করোনা এবং বতর্মান পরিস্থিতির ফলে এ প্রকল্পের কাজে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সিডিউল যাতে ঠিক থাকে সেটা বার বার বলা হয়েছে, ওরাও (রোসাটম) বলেছে ঠিক থাকবে। আগামী বছরের শেষ দিকে প্রথম ইউনিটে ফ্রেস নিউক্লিয়ার ফুয়েল লোডিং উদ্বোধন হবে। রাশিয়াতে এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক অর্জন, আন্তর্জাতিকভাবে এ কাজটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপনের মধ্য দিয়ে করা হয়। এ সময় অনুষ্ঠানে আমরা চাচ্ছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২২
এসকে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।