মানিকগঞ্জ: আসন্ন বোরো মৌসুমকে সামনে রেখেই চ্যালেঞ্জ ছুড়েই চোর চক্র চুরি করছে পল্লী বিদ্যুতের মিটার। চুরির পর বিশেষ কায়দায় রেখে যাচ্ছে একটি চিরকুট, তাতে আবার লেখা মোবাইল নাম্বার।
মানিকগঞ্জ জেলার বেশ কিছু এলাকায় প্রতিনিয়তই কারো না কারো বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হচ্ছে। মিটারের মালিকরা থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। যে কারণে চোরের কথা অনুযায়ী তাদের (চোর) চাহিদা মাফিক টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দিয়েই ফেরত নিচ্ছে মিটার। এতে করে পুলিশ প্রশাসনের ওপর দিনকে দিন ভরসা হারিয়ে ফেলছে সাধারণ জনগণ ।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার শুরু হয় সদর উপজেলার কয়েকটি এলাকা দিয়েই মাঝে বেশ কিছু দিন মিটার চুরি বন্ধ ছিল। তবে আবার ওই মিটার চুরির চক্র আট-ঘাট বেঁধে নেমেছে সাটুরিয়া উপজেলায়।
গত কয়েক দিনের জরিপে দেখা যায়, একটি ইউনিয়ন থেকেই ১০টির মতো বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়েছে। পরে বিশেষ কায়দায় রেখে যাচ্ছে ফোন নাম্বার এবং ওই নাম্বারে ফোন দিলে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করে ওই চক্রটি। তাদের চাহিদা মাফিক টাকা পাঠালেই নির্ধারিত স্থানেই পাওয়া যায় খোয়া যাওয়া মিটার। এসব মিটার চুরির পর সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করেও কোনো ধরনের প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। ফলে ওই চক্রের ফাঁদে পা দিতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, আমরা একাধিকবার বলেছি, এই মিটার চুরির বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে। কিন্তু তারা কেনো কিছু করছে না। অপরদিকে প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েই চুরি করছে বৈদ্যুতিক মিটার এটা নিয়েই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে জনমতে।
টাকা পাঠিয়ে ফেরত আনেন বৈদ্যুতিক মিটার সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া এলাকার আব্দুল করিম (সাবেক ইউপি মেম্বার)।
তিনি বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার মিলঘরের বৈদ্যুতিক লাইন বন্ধ। একটু পর দেখি মিটার নেই! মিটারের পাশেই বিশেষ কায়দায় একটি স্থানে প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে মোড়ানো একটি কাগজ। পরে কাগজ খুলে দেখি একটি মোবাইল নাম্বার, পরে আমি ওই নাম্বারে ফোন দেই। ফোনে কথা বলার সময় আমার কাছে আট হাজার টাকা চায় এবং আমি তাদেরকে পাঁচ হাজার টাকা দেই। টাকা পাওয়ার পর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশের একটি ব্রিজের নিচে যেতে বলে, ওদের কথা অনুয়ায়ী ওখানে গিয়ে দেখি আমার মিটার। পরে আমি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে দরখাস্ত করে পুনরায় সংযোগ নিই।
ওই একই এলাকার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত দুই কয়েক দিন আগে আমার রাইস মিলের মিটার চুরি হয়। পরে চক্রটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে গেছে। আমি ওই নাম্বারে ছয় হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখন আরও চার হাজার টাকা চাচ্ছে। আমি এ বিষয়ে সাটুরিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগও করেছি।
নাম পরিচয় না করার শর্তে এক গ্রাহক বাংলানিউজকে বলেন, বৈদ্যুতিক লাইন থাকা সত্ত্বেও মিটার চুরি হচ্ছে, এটা কিন্তু ভাবার বিষয় কারণ এই সম্পর্কে পারদর্শী না হলে কেউ এ কাজ করতে পারবে না। বিদ্যুৎ অফিসের সঙ্গে এই (চোর) চক্রের সম্পর্ক আছে তা না হলে এই কাজ কোনোভাবেই সম্ভব না।
মানিকগঞ্জ পল্লী বিদুৎ সমিতি, মানিকগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বৈদ্যুতিক মিটার চুরি শুধু যে এই জেলাতে হচ্ছে এমনটা নয়, এটা সারাদেশেই হচ্ছে। মাঝেমধ্যে এ ধরনের অভিযোগ পাই আমরা। গ্রাহক, পুলিশে অভিযোগও করছে, কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
আমরাও বার বার পুলিশ প্রশাসনকে বলছি, কিন্তু তারা কী করছে এটা ঠিক আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।
বৈদ্যুতিক মিটার থেকে চুরি করাটা তো অনেক ঝুঁকির, এই চুরির সঙ্গে আপনার দপ্তরের চাকরিরত কিংবা এ ধরনের বৈদ্যুতিক কাজের সঙ্গে জড়িত এই রকম কেউ আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার দপ্তরের কেউ জড়িত নয়, তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম বলেন, আমার কাছে বেশ কয়েকটা অভিযোগ এসেছে। এই মিটার চুরির বিষয়ে এবং আমি এই বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২২
এএটি