ঢাকা: পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
সোমবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল এক ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিইআরসি সূত্রে জানায়, আগে পাইকারী পর্যায়ে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দর ছিল ৫ টাকা ১৭ পয়সা এখন যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ২০ পয়সা। এই দফায় প্রতি ইউনিটে পাইকারী পর্যায়ে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম বাড়লো ১ টাকা তিন পয়সা।
আজ দুপুরে বিইআরসি পক্ষ থেকে মূল্য বাড়ানোর ঘোষণা আসার বিষয়টি ছিল পূর্ব নির্ধারিত।
বিইরআসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও খুচরা বা গ্রাহক পর্যায়ে এখনই দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।
এর আগে এর আগে, চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির কাছে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
পিডিবির আবেদনকে অযৌক্তিক ব্যাখ্যা করে সেই সময় তা নাকচ করে দেয় বিইআরসি। এর এক মাস পরই দাম বাড়ানোর কিছু যৌক্তিক কারণ তুলে ধরে পুনরায় আপিল করে পিডিবি।
পিডিবির আপিলের ওপর গণশুনানি করে ১৩ অক্টোবর দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দেয় কমিশন। কমিশন প্রস্তাবটি রিভিউ করে আবারও জমা দিতে পারবে বলে পিডিবিকে জানায়। ১৪ নভেম্বর পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর জন্য রিভিউ আপিল করে পিডিবি। সেটি পুনরায় যাচাই-বাছাই করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিইআরসি।
এই পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম কী পরিমাণ বাড়ানো হবে, তা জানায়নি বিইআরসি। ১৮ মে পিডিবির পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব করা হয়, তাতে পাইকারি বিদ্যুতের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেই প্রস্তাবে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করে।
বিইআরসির বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণার বিরোধিতা করছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এম শামসুল আলম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো ঘোষণা দিচ্ছে বিইআরসি।
তারা বলছেন, গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানা হবে না। কিন্তু উচ্চ দামে বিদ্যুৎ কিনে বিতরণ কোম্পানি গ্রাহকদের সাশ্রয়ী দামে বিতরণ করবে কীভাবে? এটি গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা।
তিনি বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নির্ভর করছে পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর ওপর। এই মুহূর্তে দেশের মানুষের এটি বহন করার মতো অবস্থা নেই। সাধারণ মানুষের ওপর এটি চাপ তৈরি করবে। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টি মোটেও বিবেচনাপ্রসূত বলে মনে হচ্ছে না। কিছুদিন পর পর অযৌক্তিকভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো অনৈতিক।
পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর সুপারিশ শিগগিরই করা হবে বলে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।
নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। এমন হলে তো আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে। আমরা বিইআরসির ঘোষণার অপেক্ষা করছি। তারা কী পরিমাণে দাম বাড়ায়, সেটির ওপর নির্ভর করছে আমরা গ্রাহকদের কী দামে বিদ্যুৎ দিতে পারব।
এ নিয়ে গত এক দশকে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ৯ বার বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। বিইআরসি সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ইউনিটপ্রতি পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করেছিল।
আরও পড়ুন>>>পাইকারিতে আরও এক দফা বাড়ছে বিদ্যুতের দাম
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২২/আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা,
এসআর/এএটি