ঢাকা, রবিবার, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৮ জুন ২০২৫, ১১ জিলহজ ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

ডেনমার্কে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন আইনে শঙ্কায় বাংলাদেশিরা

সাগর আনোয়ার, জার্মানি থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১১, জুন ৮, ২০২৫
ডেনমার্কে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন আইনে শঙ্কায় বাংলাদেশিরা

ইউরোপের অন্যতম সুখী দেশ ডেনমার্কে স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশিসহ বিদেশি শিক্ষার্থীরা। দেশটির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাজের সুবিধা পুরোপুরি বন্ধ, ভিসা প্রাপ্তিতে কড়াকড়ি, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধ, এই বছরের নতুন সেমিস্টার থেকে উচ্চমাত্রায় সেমিস্টার ফি আরোপ, পড়াশোনার পর ডেনমার্ক ছাড়ার বিধানসহ নানা কঠিন শর্তে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশিসহ ইউরোপের বাইরের শিক্ষার্থীরা।

ডেনমার্কের অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ২ মে ২০২৫ থেকে ডেনমার্ক সরকার নতুন আইন কার্যকর করেছে। এই আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিমাসে ৯০ ঘণ্টা কাজের অনুমোদন আর পাবে না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাংলাদেশ বা নন ইউরোপ থেকে আসা স্বামী বা স্ত্রীও কোনো ধরনের কাজের অনুমোদন আর পাবে না। এ ছাড়া পড়াশোনা শেষ করে ডেনমার্কে আগে যেমন চাকরি খোঁজার জন্য সময় দেওয়া হতো, সেটাও নতুন আইন অনুযায়ী বাতিল করা হয়েছে। এই আইন ২ মের পর যারা ডেনমার্কে আসবেন তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

ডেনমার্ক সরকারের এমন কঠোর নীতির কারণ সম্পর্কে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম আজহারী বাংলানিউজকে বলেন, সরকার অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে নেপাল ও কিছু নন ইউরোপের দেশ থেকে আসা বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পড়াশোনার নামে ডেনমার্ক এসে শুধু কাজ করে। এতে সরকার মনে করছে তাদের দেশের শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে এমন অভিযোগ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেও উঠে এসেছে। তাই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  

আলবর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রোমেল হাসান (ছদ্মনাম) বাংলানিউজকে বলেন, আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ মাসের সেমিস্টার ফি ছিল ৬ হাজার ৫০০ ইউরোর মতো। আগামী সেমিস্টার থেকে সেটা প্রায় ৮ হাজার ইউরো হয়ে যাবে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি বিষয়ে এখন থেকে আর বিদেশি শিক্ষার্থীই ভর্তি হতে পারবে না। আমাদের সিটিতে পার্টটাইম চাকরির অবস্থাও খুব একটা ভালো না। এভাবে আমার মতো সবাই খুব চাপ অনুভব করছে। চাকরি করে টিউশন ফি তো দূরের কথা, এখন নিজের খরচ চালানোও দুষ্কর হয়ে উঠেছে। অনেকেই ডেনমার্ক ছেড়ে স্পেন বা পর্তুগাল চলে যাওয়ার চিন্তা করছে। আমি নিজেও স্পেন চলে যাবো।

তিনি আরও বলেন, ডেনমার্কের ছোট শহরগুলোতে খণ্ডকালীন চাকরি এখন নেই বললেই চলে। এজন্য সবাই রাজধানী কোপেনহেগেনে চলে যায়। এখন সেখানেও কাজ নেই। অনেকে বাংলাদেশে থাকা পরিবার ও বন্ধুদের কাছে নিজেদের দুর্বিষহ কষ্টের কথা লজ্জায় বলতেও পারে না। এটাই এখন ডেনমার্কের বাস্তবতা।  

উরহাউজ শহরের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সুবর্না পাল বাংলানিউজকে বলেন, আসলে দেশ ছাড়ার চিন্তা থেকেই ডেনমার্ক আসা। আমার মতো অনেক তরুণ-তরুণীই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থাতেই দেশ ছাড়ার জন্য হন্যে হয়ে সুযোগ খুঁজে। এজন্য অনেক সময়ই আমাদের ঝুঁকি নিতে হয়। কিন্তু এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি করে জীবন ধারণ ও সেমিস্টার ফি দেওয়া একেবারেই অসম্ভব। যাদের পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে তাদেরই কেবল আসা উচিত ডেনমার্ক। অন্যথায় অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এমন বাস্তবতা ডেনমার্কে আসার পর দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদেরও বলা যায় না। অনেকে নীরবে অন্য কোনো দেশে সুযোগ খুঁজে।  

বাংলাদেশি কমিউনিটির রাকিবুল ইসলাম বলেন, নতুন করে যারা বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্কে আসবেন তাদের আসার আগে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে আসা উচিত। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও ভর্তির সুযোগ থাকলেও সরকার সামনে আরও কঠিন নিয়মকানুন তৈরি করবে এমন আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের কোনো এজেন্সি বা ইউটিউবের চটকদার ভিডিও দেখে বিভ্রান্ত না হয়ে বাস্তবতার আলোকে ডেনমার্ক এলে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। এখানে আসার পর অনেকে আর্থিক সংকটেও পড়ছে। আমরা কমিউনিটির পক্ষ থেকে অনেককে সাহায্যও করে থাকি। কিন্তু সংখ্যাটা এখন বেড়ে যাচ্ছে। তাই স্কলারশিপ কিংবা যাদের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে তাদেরই ডেনমার্ক আসা উচিত।

আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।