ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

ম্যানচেস্টার থেকে দেশমাতাকে নিয়ে ভাবনা

গাজী মহিবুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১১
ম্যানচেস্টার থেকে দেশমাতাকে নিয়ে ভাবনা

আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জন্মগ্রহণ করেছি, তারা সত্যিই বড় ভাগ্যবান। কারণ আমরা জন্মেই পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ এবং একটি লাল-সবুজ পতাকা।

আবার মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা বোধহয় অনেক র্দুভাগা কারণ দেশের জন্য কিছুই করতে পারলাম না। না পারলাম দেশের মুক্তি সংগ্রামে অংশ নিতে, না পারলাম দেশ গড়ার কাজে নিজেকে উজাড় করে দিতে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ পার করল তার স্বাধীনতার ৪০ বছর।

সময়ের দিক থেকে বিবেচনা করলে দেশ এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে যার জন্য হয়তো একদিন এই বলে আক্ষেপ করতে হবে যে ‘হায় ! একি করলাম। ’ দেশে এখনও মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী অনেক বীরসেনা  জীবিত আছেন যাদের হাত ধরে এসেছিল বাংলার স্বাধীনতা। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আজ থেকে ২০/২৫ বছর পরে হয়তোবা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে একজন মুক্তিযুদ্ধাকে উপযুক্ত প্রমাণসহ খোঁজে দিতে পারলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তীরা যদি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতেন এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতেন তাহলে হয়তো দেশের রাজনৈতিক চিত্রটা একটু ভিন্নও হতে পারতো। রাজনীতিবিদদের মধ্যে যদি দেশপ্রেম না তাকে দেশের উন্নয়ন কখনই সম্ভব নয়। রাজনীতিবিদ যদি দেশপ্রেমিক না হয়ে, হন কোন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী তাহলে তো শেয়ার মার্কেটের অবস্থা এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক।

আমি এটা বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস করেই মরতে চাই যারা দেশমাতৃকার জন্য একদিন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল তারা অন্তত দেশটাকে গুটি কয়েক ব্যবসায়ীর হাতে বা তথাকথিত রাজনীতিকের হাতে এভাবে জলাঞ্জলি দিতে পারেন না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে না চাইলেও এটা সত্য যে বর্তমানে আমাদের সেই দেশপ্রেমিক নেতৃবৃন্দ যারা এক সময় দেশের জন্য জীবনবাজি রেখেছিলেন, যারা এখন দেশের কর্ণধার তাদের দিকে তাকালে মনে হয় তারা সেই দেশপ্রেমিক চেতনা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছেন।

তাই আমাদের মতো নতুন প্রজন্ম রাজনীতির এই অপসংস্কৃতি দেখে সত্যিই আজ বিভ্রান্ত এবং হতভম্ব। আমরা এর অবসান চাই। আমরা আজ সামনে তাকাতে চাই। স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা আজও বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় যেসব সুযোগ সুবিধা থাকা উচিৎ ছিল তার কোনোটাই পূরণ করতে পারিনি কিন্তু এগুলো নিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দের কোন মাথা ব্যথা নেই। পৃথিবী আজ কোথায় যাচ্ছে আর আমরা কোথায় পড়ে আছি ভাবতেই অবাক লাগে।

বিদেশে এসে অন্তত এটা বুঝতে পেরেছি যে দেশে কোন কিছুর অভাব নেই, অভাব যেটা আছে সেটা হচ্ছে যোগ্য নেতৃত্বের। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ডিজিটাল যুগে এসে আমাদের মতো একটা দেশ এভাবে পিছিয়ে যেতে পারে না। কারণ সারা পৃথিবীতেই বাঙ্গালিরা তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। তাই আমরা বাবা অথবা স্বামীর দোহাই দিয়ে রাজনীতির নামে ইতিহাস নিয়ে টানটানি বন্ধ করে যোগ্য নেতৃত্বের সুযোগ করে দিয়ে রাজনীতির কালো থাবা থেকে দেশ মুক্ত হবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।

আজকে যখন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলো আসে আমরা হয়তো ব্যস্ত হয়ে পড়ি এইসব দিবস পালনের জন্য। আর এই দিবস পালনের যে আনুষ্ঠানিকতা তার মাধ্যমেই আমরা আমাদের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করি। পাশাপাশি নিজেকে নেতা হিসেবে লোক সমাজে তুলে ধরতে চাই। একবারও কি চিন্তা করেছি- সেই মায়ের কথা যে মা তার সন্তান হারিয়েছে এই দেশমাতৃকার জন্য, সেই বোনের কথা যে বোন তার স্বামী হারিয়ে অকালে বিধবা হয়েছে।

এতো প্রাণ, এতো রক্ত আর এতো ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত যে স্বাধীনতা আমরা কেন এর চেতনা থেকে দূরে চলে যাচ্ছি? একটা জাতীকে বিশ্ব পরিম-লে এগিয়ে নেওয়ার জন্য স্বাধীনতার চেতনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো দেশ পরিচালনার জন্য রাজনীতি করবে, দলাদলি করবে সবই ঠিক আছে কিন্তু স্বাধীনতা নিয়ে, জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কোনো রাজনীতি হোক এটা কারো কাম্য নয়। দেশে রাজনৈতিক দল করার খাতিরে দশটা-বিশটা ভাগ হতে পারে কিন্তু স্বাধীনতার প্রশ্নে কিংবা জাতীয় ইস্যুতে দেশের জনগণের মধ্যে কোনো বিভাজন থাকতে পারে না।

আসুন সবাই মিলে সকল ভেদাভেদ ভুলে স্বাধীনতার এই ৪০ তম বর্ষপূর্তিতে লাল-সবুজ পতাকাটার দিকে একবার প্রাণ খুলে তাকাই এবং দেশের উন্নয়নে এক হয়ে কাজ করি।

লেখক : সাংবাদিক, মানচেস্টার, যুক্তরাজ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।