ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী ‘বিমান’, হাঁকডাকেই সময় পার

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৬
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী ‘বিমান’, হাঁকডাকেই সময় পার

মালয়েশিয়ার পথে (শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর থেকে): শব্দটা খুবই চেনা। অন্তত হাঁক ডাক তো বটেই! গুলিস্তান, গাবতলী, সায়দাবাদ, মহাখালী বা যাত্রাবাড়ির পরিচিত দৃশ্যের সাথে মিলে যায় অনেকখানি।

ব্যতিক্রম কেবল পরিবেশটাই।

"কুয়ালালামপুর। মালয়েশিয়া" হাঁক দিয়ে অজানা, অচেনা যাত্রী। যাকে সামনে পাচ্ছেন। তাকেই সেই গন্তব্যের যাত্রী কি না তা জিজ্ঞেস করছিলেন গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসার রেজাউল ইসলাম। যখন কেউ নেই সামনে। তখনো মুখ চলছে রেজাউলের।

দু'একজন যখন সামনে চলে আসেন, তখন কিছুটা স্বস্তি, কিছুটা বা কাঠিন্যের ভাব ফুটে ওঠে রেজাউলের চেহারায়। চেহারাটা বেশ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা নিয়েই বলছিলেন, "আসেন। আপনারা চলে আসেন"। এভাবেই বিলম্বে বোর্ডিং ব্রিজের দিকে আসা যাত্রীদের এগিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি।

আবার দৌড়ে কখনো বা ইমিগ্রেশনের কাছে গিয়ে গলার সুরটা কোথাও চড়িয়ে। কোথাও বা মৃদু করে গন্তব্য নিয়ে পুরনো সেই হাঁকডাক।

টারমাকে দাঁড়িয়ে বিমানের ফ্লাইট বিজি ০৮৬। গন্তব্য মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর।
যথাসময়ে বোর্ডিং পাশ। ইমিগ্রেশন শেষ। বিমান ছাড়ার সময় রাত ৮টা।

ঘড়ির কাঁটায় রাত ৮টা। কোন তাড়াহুড়ো নেই। টিক টিক করে চলছে ঘড়ির কাঁটা। সময় তখন সাড়ে আটটা পেরিয়ে ৮টা ৩৫।

কেন উড়োজাহাজ উড্ডয়নে বিলম্ব, বা কোন যাত্রীরা বোর্ডিং পাশ নিয়ে বা ইমিগ্রেশন শেষ করে বোর্ডিং ব্রিজে সময় মতো উপস্থিত হননি। সে সবের ঘোষণা দেবার বালাই নেই রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমানের।

সব প্রস্তুতি নিয়ে উড়োজাহাজ পার্কিং এলাকায় (টারমাক) পাইলট,কেবিন ক্রু প্রস্তুত। তবুও উড্ডয়ন হচ্ছে না উড়োজাহাজের।

উন্নত দেশে নির্ধারিত সময়ে বোর্ডিং ব্রিজের গেটে তালা ঝুললেও সে ব্যাপারে নজর নেই হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের।

গন্তব্যের উদ্দেশে আকাশে ওড়ার আগে শেষ ধাপ বোর্ডিং ব্রিজে যাত্রীদের দেহ এবং হ্যান্ড লাগেজের চূড়ান্ত তল্লাশি তখনো চলছেই। বোর্ডিং ব্রিজ ঘিরে অপেক্ষমান যাত্রীরা ত্যক্ত বিরক্ত। তীর্যক নানা মন্তব্যের তুবড়ি ফোটাচ্ছেন তারা।

সোহরাব হোসেন নামের এক যাত্রী বাংলানিউজকে জানান, ফ্লাইট বিলম্ব যেন বিমানের পিছুই ছাড়ছে না।

জাকারিয়া ফেরদৌস নামের আরেক যাত্রী বাংলানিউজকে জানান, বিমান কবে থেকে সময় মেনে চলবে। এভাবে চলতে থাকলে আস্থা বলে তো আর কিছুই থাকবে না।

সরদার ফয়েজ নামের আরেক যাত্রী জানান, বিলম্বের কারণে কানেক্টিং ফ্লাইট আছে। এমন কোন গন্তব্যে বিমানের ওপর ভরসা রাখতে পারি না।

গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসার রেজাউল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আমার দায়িত্ব লোডিং আন লোডিং করা। তারপরও যাত্রীদের ডাকাডাকি করি।

অবশেষে প্রায় এক ঘণ্টা বিলম্বে আকাশে ওড়ে বিমানের ফ্লাইট বিজি ০৮৬। এই বিলম্ব কিভাবে পরের শিডিউলের সাথে সমন্বয় করা হবে? এ প্রশ্নের জবাবে কেবিন ক্রু আদি বাংলানিউজকে জানান, বিলম্বের জন্যে আমাদের দোষারোপ করা হয়। তবে আমরা শুক্রবার রাতে প্রস্তুত থাকলেও যাত্রীরা সময় মতো আসেননি।

কি করবো বলুন। এই গন্তব্যে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের সংখ্যাটাও নেহায়েত কম না। একবার ফ্লাইট মিস করলে চাকরি আর অর্থ দুটোই যাবে তাদের। কি আর করা! তাদের বিষয়টিকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে গিয়েই কখনো সখনো বিলম্ব হয় আমাদের। যোগ করেন এই কেবিন ক্রু।

আরও পড়ুন- নতুন পরিচয়ে শাহজালালের ইমিগ্রেশন, সেবায় মুগ্ধতা

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৬
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।