সেই তিনি হঠাৎ করেই ভুলে গেলেন নিজের ‘ক্যারিয়ার’ নিয়ে আরও উঁচুতে ওঠার কথা। সেটা ছেড়ে কোমর বেঁধে নেমেছেন বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরতে।
ইন্দোনেশিয়ায় প্রবাসী অন্যান্য দেশের মানুষদের কাছে তুলে ধরছেন লাল-সবুজের অনন্য বাংলাদেশকে। নানা উৎসব-আয়োজনে ভিনদেশি বন্ধুদের শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরিয়ে তাদের কাছে তুলে ধরছেন দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।
প্রবাসে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে খুঁজে ফিরছেন বাংলাদেশে শিল্প বা বিনিয়োগের নানা সম্ভাবনা। ভিনদেশিদের কাছে তুলে ধরছেন বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনাকেও।
তিনি হুমায়রা আয়শা খান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় ইন্দো বাংলা সাকসেস ট্রেডিং নামে একটি সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কো ফাউন্ডার।
রাজধানী জাকার্তা, বালি দ্বীপ, সুনামি প্রকম্পিত আচেহ থেকে ১৩ হাজার ৬শ দ্বীপের এ ভূখণ্ডের এই দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যাটা একেবারে হাতে গোনা। তবে হুমায়রা আয়শা খানকে সবাই চেনেন এক নামে।
ব্যবসা-বাণিজ্যে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ায় নতুন শিক্ষণ পদ্ধতিতে গড়ে তুলেছেন প্রি-স্কুল। যেখানে ইন্দোনেশিয়া প্রবাসী অন্যান্য দেশের মানুষরা সন্তানকে পড়িয়ে, হুমায়রা আয়শা খানকে দিয়েই চেনেন অন্য এক বাংলাদেশকে।
চট্টগ্রামের মেয়ে হুমায়রা আয়শা খান। বাবা মৃত আতাউর রহমান খান কায়সার। তিন বোনের মধ্যে মেজ হুমায়রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে পড়াশোনা করে যোগ দেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার ব্যাংকে। সর্বশেষ ছিলেন ব্যাংকটির ব্যাংকস ও ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন বিভাগের পরিচালক। স্বামী সাজিদ রহমানের সঙ্গে নাইজেরিয়ায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন হেড অব রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। ২০১৩ সালে চলে আসেন ইন্দোনেশিয়ায়।
প্রিয় বাবাকে হারানোর শোক এবং এর প্রায় দেড় বছরের মাথায় মা-কে হারিয়ে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনায় বিশাল পরিবর্তন আসে তার। বেরিয়ে আসেন করপোরেট ব্যাংকিং জগৎ থেকে।
নিজের ক্যারিয়ার আর নয়, সমাজ ও দেশের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ায় হন নারী উদ্যোক্তা। দ্বীপরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় গড়ে তোলেন ইন্দো-বাংলা সাকসেস ট্রেডিং নামে সংস্থা।
আদরের সন্তান ইরভানকে (৭) পড়াতে গিয়ে ভিনদেশেই মজার পরিবেশে শিশুদের পাঠাভ্যাস তৈরি করতে অভিজাত ‘কে বায়োরেন বারু’ এলাকায় গড়ে তোলেন প্রি-স্কুল ‘লার্নিং ক্যাসেল’।
এখানে সফলতার পর এখন হুমায়রা আয়শা খান ‘কে মায়োরেন’ এলাকায় খুলতে যাচ্ছেন দ্বিতীয় শাখা।
বাংলানিউজকে হুমায়রা বলেন, আসলে আমাদের দেশে শিশুকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বোঝা চাপিয়ে দিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের বইভীতি তৈরি করা হয়।
‘বই মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। মানব জীবনের সুন্দর অভ্যাসগুলোর মধ্যে অনন্য বই পড়া। আমরা মনে করি রিডিং ইজ ফান। কুকিং ইজ ফান। মজার পরিবেশে রান্নার মাধ্যমেই কিন্তু আপনি শেখাতে পারেন গণিত কিংবা বিজ্ঞান। যেমন ধরুন, ভগ্নাংশ শেখাতে আপনি যদি একটি ব্রেডকে চার ভাগে ভাগ করেন, সেটা কিন্তু সহজেই তার মাথায় ঢুকে যাবে। ’
তিনি বলেন, সুঁই থেকে জাহাজ সবকিছুই হয় ইন্দোনেশিয়ায়। বিশেষ করে শিল্পে এগিয়ে চলেছে ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশি পণ্যগুলোর কী ধরনের চাহিদা রয়েছে এখানে তা জানতে একটি মার্কেট রিসার্চ কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছি আমরা।
‘দেশে তৈরি বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বাজারজাত করার উদ্যোগ নিলেও তেমনভাবে সাড়া মেলেনি এখানে। বরং এখান থেকেই এখন বড় দু’টো সেক্টরে বিনিয়োগ নিয়ে যাচ্ছি আমরা বাংলাদেশে। ’
উইন্ডমিলের মাধ্যমে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করে সেখান থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে কাজ করছি আমরা। ইন্দোনেশিয়ায় থাকলেও আমাদের স্বপ্নগুলো কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে। কারণ, আমাদের চেতনা হৃদয়ে আঁকা লাল-সবুজ রঙ ঘিরে। যার নাম বাংলাদেশ, যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
এসএনএস
** সন্ধ্যা হতেই বাতি নেভে শাহজালালের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের
** এবার ইন্দোনেশিয়ার পথে বাংলানিউজের জাহিদ