ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বাংলার প্রাণের কাছে

পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বেঁচে থাকবে লোকজ গান

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬
পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বেঁচে থাকবে লোকজ গান ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রংপুর ঘুরে: লোকজ ভাওয়াইয়া গানকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার বলে মনে করেন বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী রণজিৎ কুমার রায়।

তিনি বলেন, লোকজ শিল্পীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা খুবই খারাপ।

দিন আনে দিন খাইয়ের মতো। এরপরও ভালোবেসে প্রাণের সংগীতটাকে ধরে রাখছেন। ভাওয়াইয়া শিল্পী ও গান রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।

শহরের ইঞ্জিনিয়ারপাড়ায় রংপুর ভাওয়াইয়া অঙ্গনে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এ ভাওয়াইয়া শিল্পী বলেন, বাউল সম্রাট আবদুল করিম ও লালন সাঁইজির আখড়ায় উৎসব হয়। আমরাও ভাওয়াইয়া উৎসব করতে চাই। এ ঐতিহ্য রক্ষার জন্যে সংশ্লিষ্টদের পৃষ্ঠপোষকতা চাই।

তিনি বলেন, ভাওয়াইয়া গান একেবারেই গ্রামের নিরক্ষর, দরিদ্র মানুষের গান। জমিতে কাজ করার সময় কেউ সুর টান দিলো…সঙ্গে আরও দু’জন বাহ বাহ, ব্যাস ব্যাস বলে বাহাস দিলো। এভাবেই হাজার বছর ধরে প্রসার লাভ করেছে সংগীতটি।

‘গানের ছন্দ যাই হোক না কেন? তারা নিজের মতো গেয়ে আনন্দ বিনোদন করেছেন। ’ বলেন তিনি।

রণজিৎ বলেন, মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে, সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু এ ভাওয়াইয়াকে ভালোবাসছেন না কেউ! আঞ্চলিক ভাষায় লেখা বলে মূল্যহীন মনে করেন অনেকে। কিন্তু এটা আমাদের অনেক বড় সম্পদ।

ভারতের উদাহরণ টেনে এ শিল্পী বলেন, কলকাতায় প্রতিবছর ভাওয়াইয়া উৎসব হয়। সেখানে কোচবিহার, জলপাইগুড়ির লোকজ শিল্পীরা অংশ নেন। আমাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। ঢোলক, খঞ্জনিসহ নিজেদের বাদ্য দিয়ে গান গায় তারা।

‘কিন্তু আমাদের এখানে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র খুব একটা বাজানো হয় না। টিভি অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে অন্য প্রোগ্রামেও বাঁশি, দোতরা, ঢোলকের ব্যবহার নেই বললেই চলে। ’

আক্ষেপ করে ভাওয়াইয়া শিল্পী রণজিৎ বলেন, ভারতে দেখেছি-তারা চায় তাদের আদি লোকসংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যাক। তা কেউ শুনুক আর নাই শুনুক। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আমাদেরও নিজেদের মাটির প্রাণের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আমরা অতীতে কি ছিলাম তা নতুন প্রজন্মকে জানানো উচিত।

বতর্মানে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে মাঝে মধ্যে ভাওয়াইয়া গানের অনুষ্ঠান হয়। আছে চর্চার প্রতিষ্ঠানও। তবে লোক সংগীতের অন্য ধারা কুষান গান, ব্যানা কুষানের গান, রাম-লক্ষ্মণের গান, পালাগান, কবিগান, জারি গান, কাওয়ালি, পুঁথিপাঠের আসর খুব একটা বসে না। জানান তিনি।

ভাওয়াইয়া গবেষক ও সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, সুরলালিত্যে ভরপুর ও নিজস্ব গীতিরীতিতে ভাওয়াইয়া এখনও টিকে আছে। তবে আধুনিকতার কারণে ভাষাগত দিক দিয়ে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
 
লোকজ সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সবার ঐকান্তিক চেষ্টা ও মানসিকতা প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬
এমএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলার প্রাণের কাছে এর সর্বশেষ