ঢাকা, শনিবার, ৩ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

অন্যান্য

আরমানিটোলা স্কুলের ঐতিহাসিক লাল ভবন সংরক্ষণে উদ্যোগী বরকতউল্লাহ বুলু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৫
আরমানিটোলা স্কুলের ঐতিহাসিক লাল ভবন সংরক্ষণে উদ্যোগী বরকতউল্লাহ বুলু আরমানিটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের লাল ভবন। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে ১৯০৪ সালে তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল জর্জ নাথানিয়েল কার্জনের সহযোগিতায় ঢাকায় দুইটি ঐতিহাসিক ভবন নির্মিত হয়। একটি বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল ও অপরটি আরমানিটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের লাল ভবনটি।

যদিও বর্তমানে কার্জন হল ব্যবহার উপযোগী। কিন্তু ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়েছে আরমানিটোলা স্কুলের লাল ভবনটি।

ঐতিহাসিক এ লাল ভবন সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে আবেদন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, আমি অবশ্যই সঙ্গে থাকবো।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) আরমানিটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ১২০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বরকতউল্লাহ বুলু এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আরমানিটোলা স্কুলের এই লাল দালানটির আরও ১০০ বছরেও কিছু হবে না। তবে বিগত সরকারের সময় কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এটাকে ভেঙে একটি বহুতল ভবন করার প্রচেষ্টা ছিল।

১২০ বছর পূর্তি উদযাপনের আয়োজকদের উদ্দেশে বুলু বলেন, আমি আশা করি যারা এই স্কুল প্রতিষ্ঠার ১২০ বছর উদযাপনের আয়োজন করেছেন, তারা একটি আবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে করবেন। আমি অবশ্যই আপনাদের সঙ্গে থাকবো। ইনশাল্লাহ আমি কথা দিতে পারি, এ ভবনটি থাকবে।  

বরকতউল্লাহ বুলু এই প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে আমরা এই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে বের হয়েছি। পূর্ব পাকিস্তান থাকার সময় আমরা এই স্কুলের ছাত্র ছিলাম। পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র স্কুল ছিল যে স্কুলে একই সঙ্গে ভলিবল, হকি, ফুটবল, টেবিল টেনিসসহ সমস্ত খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল এই স্কুলে। তখন পূর্ব পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকমণ্ডলী দ্বারা এই স্কুল পরিচালিত হতো। আমরা যখন স্কুলের ছাত্র তখন রফিক স্যার পূর্ব পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্কুলের দায়িত্ব পালন করেছেন। পূর্ব পাকিস্তান থাকার সময় ২২ বছর এই স্কুল হকিতে চ্যাম্পিয়ন ছিল। অনেক শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ এই স্কুল থেকে পাস করে বেরিয়ে এসেছেন৷ 

তিনি বলেন, এই স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে অনেক গর্বিত মনে করি। আজকে স্কুলের মাঠে এসে অতীতের অনেক স্মৃতি আমাদের রোমন্থন করতে হয়। অনেক বরেণ্য ব্যক্তি এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। অনেক বড় শিল্পপতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তি এই স্কুল থেকে পাস করে গিয়েছেন। যেসব বরেণ্য ব্যক্তি এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন, যারা এখন জীবিত নেই, আমরা তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।  

বুলু বলেন, এই স্কুলের ৫৮ সালের শিক্ষার্থী ছিলেন ড. সায়দুল হক। তিনি পৃথিবীর মধ্যে বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ছিলেন। ওনার নাম এই স্কুলের খাতায় আসেনি। আমি অনুরোধ করব, আগামী দিনে যেন ওনার সম্পর্কে ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়। তিনি পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের অ্যাডভাইজার ছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি সৌদি বাদশাহ ফাহাদের চিফ ইকোনমিক কনসালট্যান্ট ছিলেন। ওনার কারণেই সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রম মার্কেট তৈরি হয়। আমি আশা করব আগামী দিনে যেন ড. সায়দুল হকের নামটি যেন স্মরণ করা হয়।

আরমানিটোলা স্কুলের লাল ভবন সংরক্ষণের বিষয়ে বছরপূর্তি উদযাপন আয়োজক কমিটির সেক্রেটারি আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের আরমানিটোলা স্কুলের লাল দালানটি সংরক্ষণের জন্য একটি আপিল তৈরি করতে হবে। আমরা এই লাল দালানটি সংরক্ষণ করতে চাই। এই দালানটিতে দুইজনের বেশি তিনজন হাঁটলে ভাইব্রেশন (কম্পন) হয়। কিন্তু একই সময় কার্জন হলটি হয়েছিল, সেটি যথেষ্ট ভালো আছে। তবে আমাদের এই ভবনটিকে অনেক অবহেলা করা হয়েছে।  

আতিকুর রহমান বলেন, বুলু ভাই আমাদের আরমানিটোলা স্কুলের এই লাল ভবনের বিষয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন, সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। এই বিষয়ে কোনো আপিল তৈরি করতে হলে সবার স্বাক্ষর প্রয়োজন। তাই অ্যালামনাই হিসেবে যারা আছেন তাদের সহযোগিতা কামনা করছি। পাশাপাশি আমাদের স্কুল যেহেতু ৬ জানুয়ারি শুরু হয়, তাই আগামীতে ৬ জানুয়ারি আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যেন আমরা ‘আরমানিটোলিয়ান্স ডে’ পালন করতে পারি সে বিষয়ে সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা যেন সবাই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে সকলে জুড়ে থাকতে পারি সে কামনা করছি।  

তৎকালীন ভারতবর্ষের ভাইসরয় জর্জ নাথানিয়েল কার্জন ১৯০৪ সালে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য তার সরকারের এডুকেশন পলিসি প্রকাশ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় সে বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকা সফরের প্রাক্কালে তখনকার নির্মিতব্য কার্জন হল প্রাঙ্গণে একটি সুধী সমাবেশের মাধ্যম আনুষ্ঠানিকভাবে এই দুই লাল দালানের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দুটি প্রতিষ্ঠানেরই নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয় ১৯০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।

দুর্ভাগ্যবশত সময়ের বিবর্তনে এই ঐতিহাসিক ভবনটির অবস্থা খারাপ হচ্ছে। ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে এবং দেয়ালের রং উঠে গেছে। সংরক্ষণ না করা হলে অদূর ভবিষ্যতে ঐতিহাসিক স্থাপনাটি হারিয়ে যেতে পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৫
ইএসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।