২০০৭ সালে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস এবং বিরাজনীতিকরণের জন্য একটি নীলনকশা তৈরি হয়েছিল। সেই নীলনকশার অন্যতম প্রণেতা ছিল প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার গ্রুপ।
২০০৭ সালে বেগম জিয়াকে মাইনাস করার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রথম আলো বিএনপির তৎকালীন নেতা আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে বিএনপির জন্য তৈরি করা হয় সংস্কার প্রস্তাব। সংস্কার প্রস্তাব ছিল মতিউর রহমান ও মাহ্ফুজ আনামের যৌথ প্রযোজনা।
২০০৭ সালের ২৬ জুন প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘খালেদাকে ক্ষমতাহীন করার প্রস্তাব’ শিরোনামে খবরে বলা হয়- ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্ব করে সংস্কার প্রস্তাবের খসড়া ঘোষণা করেছেন দলের মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়, দুই মেয়াদে কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকলে তিনি আর প্রধানমন্ত্রী কিংবা দলের চেয়ারম্যান হতে পারবেন না। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বেগম খালেদা জিয়া প্রকৃত অর্থেই ক্ষমতাহীন হয়ে পড়বেন। তার পক্ষে দলের চেয়ারপারসন হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। এমনকি ভবিষ্যতে দল ক্ষমতায় গেলে তিনি প্রধানমন্ত্রীও হতে পারবেন না।
গতকাল আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার ঘোষিত প্রস্তাবে গঠনতন্ত্রের এই ধারাটি পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, জাতীয় কাউন্সিলের সদস্যদের সরাসরি ভোটে তিন বছরের জন্য দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের সময় বা ছয় বছরের বেশি চেয়ারম্যান পদে থাকতে পারবেন না। যাঁরা ইতিমধ্যে ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের ক্ষেত্রেও এই বিধান প্রযোজ্য হবে।
প্রধানমন্ত্রী হলে ছাড়তে হবে দলের শীর্ষ পদ: প্রস্তাব অনুযায়ী, দলের চেয়ারম্যান যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তবে তাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে দলের চেয়ারম্যান ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে নীতিনির্ধারণী বিষয়ে পরামর্শক্রমে সরকার ও সংসদ পরিচালনা করতে হবে। দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকলে তিনি আর প্রধানমন্ত্রী এবং দলের চেয়ারম্যান হতে পারবেন না।
ক্ষমতা খর্ব: দলের বর্তমান গঠনতন্ত্রে যে কোনো কমিটি বাতিল ও কাউকে শাস্তি দেওয়াসহ সব ক্ষেত্রে চেয়ারপারসনের একক ক্ষমতা রয়েছে। সংশোধনী করে বলা হয়, চেয়ারম্যান জাতীয় স্থায়ী কমিটির অনুমোদন ছাড়া ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন না। দলীয় সাংসদ, মন্ত্রী, স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ সব কমিটির সদস্যদের প্রতিবছর জাতীয় নির্বাহী কমিটির কাছে সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সকল পর্যায়ের কার্যটিতে কর্মকর্তা নির্বাচনে দলীয় নেতাদের পরিবার ও নিকট আত্মীয়দের অন্তর্ভুক্তিকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
নীলনকশা তৈরি হয়েছিল প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার প্রণীত এই মাইনাস ফরমুলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই ২০০৭ সালের এক-এগারো সরকার গ্রেপ্তার করে বেগম জিয়া ও তার পুত্র আরাফাত রহমান কোকোকে।
উল্লেখ্য এর আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তারেক রহমানকে। বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট তৈরি করতেই প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বেগম জিয়া এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে লাগাতার অসত্য সংবাদ পরিবেশন করে। বিএনপির বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদের ডালি সাজায় প্রথম আলো গোষ্ঠী। এমনকি বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর যিনি সবকিছু থেকে দূরে থাকতেন তার বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালায় প্রথম আলো।
২১ আগস্টের ঘটনাকে ‘জঙ্গি হামলা’ হিসেবে আবিষ্কার করেছিল প্রথম আলো। প্রথম আলোর সাংবাদিক সেই টিপু সুলতান রিপোর্ট করেন ‘বিমানকে নিঃস্ব করে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন শামীম ইস্কান্দার’। যে প্রতিবেদনের একবিন্দুও সত্যতা পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়নি। উল্লেখ্য ২০১৮ সালে বেগম জিয়াকে যে মামলায় প্রহসনের সাজা দেয় সেই মামলাটিও প্রথম আলোর আবিষ্কার।
বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার ধারক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারই প্রথম জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে দুর্নীতির মনগড়া ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করে। ২০০৭ সালের ৬ আগস্ট প্রথম আলোতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কথিত দুর্নীতি নিয়ে অসত্য, মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো।
প্রথম আলোর এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই দুর্নীতি দমন কমিশন বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে হয়রানি করতে এই মামলা সাজায়। তাই এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের সময় বেগম জিয়াকে যে অন্যায়ভাবে এবং অমানবিক কায়দায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তার দায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের। প্রথম আলোর কল্পকাহিনিকে পুঁজি করেই এই মিথ্যা মামলার রায় দেওয়া হয়। এখন প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভোল পাল্টেছে বটে; কিন্তু তাদের এই ঘৃণ্য সাংবাদিকতা বাংলাদেশের জনগণ ভুলবে কী করে?
সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫