ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

আদর্শ গ্রামের ‘রসের যশ’ 

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
আদর্শ গ্রামের ‘রসের যশ’ 

ফেনী: বাংলা, বাঙালি, শীত আর খেজুরের রস যেন একই সুঁতোয় গাথা। সে কারণেই বলতে হয় ‘শীতের যশ, খেজুরের রস’।

খেজুরের রসের স্বাদ নেননি এমন বাঙালি কমই আছেন। খেজুরের এই রস দিয়ে তৈরি গুড়-পাটালি ছাড়া শীতকালটা যেন জমেই না। খেজুর রসের গুড়ের রাব দিয়ে তৈরি পিঠাপুলি-পায়েসের নাম শুনলেই নাকে ভেসে আসে সেই মোহনীয় ঘ্রাণ।

আজ একটি রসের গ্রামের গল্প বলবো। ফেনীর উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর সেই গ্রামটির নাম আদর্শ। শীত এলেই এ গ্রামের কদর আগের থেকে বেড়ে যায়। এ গ্রামের সুমিষ্ট খেজুরের রস পৌঁছে যায় জেলার নানা প্রান্তে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় পৌঁছে যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে দেশের অন্য অঞ্চলেও।  

এই গ্রামের শিক্ষিত যুবক সজীব রায়হান। এই যুবকের প্রচেষ্টাতেই পুরো জেলার নানা প্রান্তে পৌঁছে যায় এই গ্রামের মিষ্টি রস।  

সজীব জানান, প্রতিদিন তিনি আড়াই থেকে তিনশ লিটার খেজুরের রস সরবরাহ করছেন এই মৌসুমে। আরও কয়েকজন আদর্শ গ্রাম থেকে রস নিয়ে বিক্রি করেন। সব মিলিয়ে প্রতিদিন এ গ্রামের খেজুরের গাছগুলো থেকে সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ লিটার খেজুরের রস হয়।



সজীব বলেন, একটা সময় ছিল যখন গাছিরাই শীতকালে খেজুরের রস বিক্রি করতেন। এখন সময় পাল্টে গেছে। ডিজিটাল এই যুগে রস বিক্রি করছেন সুদর্শন শিক্ষিত যুবকরা। মাধ্যম হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বেছে নিয়েছেন তারা। শীত মৌসুমে কয়েক মাস এ ব্যবসা করে আয়ও বেশ ভালো করছেন এ যুবকরা।  

আদর্শ গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা সজীব রায়হান জানালেন, মি. সস নামের একটি ফেসবুক পেজ ও তার আইডির সহযোগিতায় তিনি রস বিক্রি করছেন অনলাইনে। চলতি মৌসুমে তিনি মোট ২০ হাজার লিটার খেজুরের রস বিক্রি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন তিনি।

বিগত বছরেও ১১ হাজার লিটার খেজুরের রস বিক্রি করেছেন বলেও জানান তিনি।  

তরুণ এই উদ্যোক্তা জানান, নিজের রয়েছে ১৫০টি খেজুর গাছ এবং গ্রামের অন্যদের থেকে আরও ২৫০টি খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে সরবরাহ করেন তিনি।  

তিনি জানান, বাবা এবং ভাইকে নিয়েই তিনি রসের এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সময় এবং চাহিদা বুঝে লিটার প্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় তার রস। নিজের ফেসবুক প্রোফাইল, ফেনীর বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও পেইজের মাধ্যমেই তিনি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেন।  



সজীব জানান, বিক্রির ৮০ শতাংশই  আসছে অনলাইন থেকে। অনলাইনে বিক্রি কারণে ভালো লাভ পাওয়া যাচ্ছে।  

রস সংগ্রহ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে সজীব জানান, প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে তার বাবা-ভাই এবং তিনি গাছ কাটা শুরু করেন। মাগরিব নামাজ পর্যন্ত সেই কাজ চলে। এরপর চলে গাছে রসের পাত্র বসানো। চোর থেকে রক্ষা করার জন্য রাতে গাছ পাহারা দিতে হয় খেজুরের গাছগুলো। ভোর ৪টা থেকে শুরু হয় রস সংগ্রহ।  

সজীব জানান, নিজের ফেসবুক প্রোফাইল ও বিভিন্ন গ্রুপ থেকে অর্ডার আসার পর মোবাইলের নোটবুকে টুকে রাখেন তিনি। পরদিন সকালে নির্ধারিত ডেলিভারি পয়েন্টে নিজেই পৌঁছে দেন। পুরো মৌসুমের জন্য ভাড়া করা হয়েছে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা। সেটিতে করেই রস পৌঁছে যায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।  

সজীব বাংলানিউজকে বলেন, অনলাইনে রসের বিক্রির কারণে গ্রামের অন্য সাধারণ গাছি এবং গাছ মালিকরাও উপকৃত হচ্ছেন। অনেকেই আগে রসের ক্রেতা পেতো না। অনলাইনে প্রচার-প্রচারণার কারণে এখন খুব সহজেই ক্রেতা মিলছে। নিজেরটা বিক্রির পাশাপাশি তাদেরটাও বিক্রি করতে পারছি। এতে তারা আগের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন। এছাড়াও খেজুরের রস থেকে তৈরি রাবও বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। একদম নির্ভেজাল কোনো ধরনের মিশ্রণ ছাড়া এই রাব বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩শ টাকায়।

গ্রামের বাসিন্দা রহিম জানান, আগেও আমরা খেজুরের রস বিক্রি করতাম। তবে দাম পেতাম না। গ্রামের যুবক সজীব অনলাইনের মাধ্যমে রস বিক্রি করায় এখন বেশ ভালো দামই পাওয়া যায়।

 
হারুন নামের আরেকজন জানান, সিস্টেমটা দারুণ! মানুষ ফেসবুক থেকে কিনছে রস, পৌঁছে যাচ্ছে তাদের বাড়িতে।  

ফেনী শহরের ডাক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফায়সাল বিন মাহমুদ জানান, আরও বিভিন্ন এলাকার রস খাওয়া হয়েছে আদর্শ গ্রামের রসের মত না। ফেনীতে আদর্শ গ্রামের খেজুরের রসই সবার সেরা। দারুণ মিষ্টি হয় এ এলাকার খেজুরের রস।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।