ফেনী: ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে বিষমুক্ত নিরাপদ পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
পরিবেশ বান্ধব এই পদ্ধতির মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা পাচ্ছে তেমনি টমেটোর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার রাজাপুর, সিন্দুরপুর, পূর্ব চন্দ্রপুর, জায়লস্কর ইউনিয়ন ও পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলকায় মোট প্রায় ৯০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে।
এ সকল জমি থেকে প্রায় ১৮০০ টন টমেটো উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে রাজাপুর ইউনিয়নে আড়াই হেক্টর ও পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নে প্রায় ৮ হেক্টর জমিতে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতা সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে বিষ মুক্ত উপায়ে টমেটোর চাষ করা হয়েছে।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর ও জাঙ্গালীয়া এবং পূর্ব চন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়নের পূর্বচন্দ্রপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে টমেটোর চাষ করা হয়েছে। জমির ভেতরে গিয়ে দেখা যায় গাছগুলিতে থোকায় থোকায় কাঁচা পাকা টমোটো ধরে আছে।
টমেটোর ভরে গাছ মাচা ভেঙ্গে মাঠিতে নুয়ে পড়েছে। চাষিরা গাছ থেকে পাকা টমেটো বাজারে বিক্রয়ের জন্য তুলছেন এ সময় রাজাপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের কথা হয় টমেটো চাষি মো. শাহ আলমের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এই বছর ১৭ হাজার টাকা খরচ করে দের বিঘা জমিতে কোনো প্রকার বিষ না দিয়ে টমেটোর চাষ করেছি। কম খরচে এই পদ্ধতিতে টমেটোর চাষ করে টমেটোর উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে বাজারে টমেটোর চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রয় করেছি। এখনো গাছে যে পরিমাণে টমেটো আছে তা বিক্রয় করে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় হবে।
পূর্ব চন্দ্রপুর ইউপির বাতশিরি গ্রামের টমেটো চাষি কৃষক মো. আবু ইউছুফ আলী বলেন, বিষমুক্ত পদ্ধতিতে ৩৫ শতাংশ জমিতে টমেটোর চাষ করেছি। ভালো ফলন হয়েছে। আশাকরি ভালো লাভ হবে।
একই ইউনিয়নের কৃষক আকরাম হোসেন ৩০ শতাংশ ও কৃষক মহি উদ্দিন ৫০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করছেন। পূর্ব চন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়নের নয়ানপুর গ্রামের কৃষক কবীর আহমেদ ৩৩ শতাংশ ও পূর্ব চন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক শাহ আলম ১৮ শতাংশ জমিতে এ টমেটো চাষ করছেন।
পূর্ব চন্দ্রপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মারুফ ও রাজাপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, টমেটো চাষ বেশ লাভজনক। উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। আমরা সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, দাগনভূঞা উপজেলায় প্রায় ৯০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। বিষমুক্ত উপায়ে টমেটোর চাষ করা হয়েছে।
পরিবেশ ও মানবদেহর কোনো প্রকার ক্ষতি না করে, পরিবেশ বান্ধব জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই দমন ব্যবস্থাপনা ও প্রকল্পের আওতায় কীটনাশকের প্রয়োগ কমিয়ে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের টমেটোর চাষ বৃদ্ধিতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের আগ্রহী করতে কৃষি অফিস কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৩
এসএইচডি/এসএম